বলা বাহুল্য বাংলার স্বর্ণযুগের অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। অসামান্য অভিনয় প্রতিভা আর সৌন্দর্যের মিশেল ছিলেন তিনি। তবে হঠাৎই এক জুলাই মাসের রাতে আগুনে ঝ’লসে মৃ’ত্যু হয় বাংলা সিনেমার এই অসাধারণ সুঅভিনেত্রীর। আ’ত্মহ’ত্যা, দুর্ঘটনা না খু’ন? মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃ’ত্যুকে ঘিরে আজও ঘিরে রয়েছে রহস্য।
অনেকেই বলে থাকেন মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃ’ত্যুর পিছনে হাত রয়েছেন অভিনেত্রীর স্বামী তিলক চক্রবর্তীর। আগুনে ঝলসে মৃ’ত্যু হয় মহুয়া রায়চৌধুরীর। জানা যায় তাঁর শরীরের নব্বই শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এরপর ১০ দিন ওই মারাত্মক যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করেন সেই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার সবথেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
কেউ বলেন, ছেলে তমালের জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে স্টোভ বার্স্ট করে আগুন লাগে অভিনেত্রীর গায়ে। কেউ বলেন তিনি আ’ত্মহ’ত্যা করেন। কারর মতে এটি খু’নের ঘটনা। যদি অভিনেত্রীর প্রাণ প্রিয় বন্ধু রত্না ঘোষালের কথায়, খুব অল্পে মাথা গরম করে ফেলার ধাত ছিল মহুয়ার। কোনও কিছু না পাওয়া মানেই বেঁচে থেকে লাভ নেই এমনটাই মনে করতেন মহুয়া রায়চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, দমদমের বাড়িতে থাকাকালীন গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। তখন তাঁকে তাঁর দিদি বাঁচান। এমন কি কোনও কারণে স্বামী তিলকের সঙ্গে ঝগড়া হলেও, ক্ষুর দিতে হাত কেটে ফেলতেন মহুয়া।
অভিনেত্রী আরও জানিয়েছিলেন, ম’দ্যপানের খুব বাজে নে’শা ছিল মহুয়ার। ম’দ্যপান করলেই এক অন্য মানুষে পরিণত হতেন তিনি। নে’শা কাটলেই আবার আগের মানুষটা হয়ে যেতেন। তাঁর কথায়, খুব ভালো মানুষ ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। কিন্তু ওই যে খুব অধৈর্য! নিজের প্রিয় বান্ধবীর মৃ’ত্যুকে আ’ত্মহ’ত্যাই বলেন রত্না ঘোষাল। কিন্তু কেন আ’ত্মহ’ত্যার পথ বাছলেন তিনি?
বাংলার স্বর্ণযুগের এই অভিনেত্রী এই বিষয়ে জানিয়েছিলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেল বেলা আমার বাড়িতে আসে মহুয়া।’ জানা যায়, আসলে মহুয়া রায়চৌধুরী বাংলাদেশের নামী নায়িকা হতে চেয়েছিলেন। রত্না ঘোষাল জানিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশের হাই কমিশনার আমাকে স্নেহ করতেন। আসলে ‘নহবত’ নাটকে অভিনয় করে আমার একটু নাম হয়েছিল বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশে মহুয়ার ভিসার জন্য প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে একটি চিঠির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে সেই চিঠি আসেনি। একটু সময় লাগছিল। অধৈর্য্য হয়ে উঠছিল মহুয়া। কিন্তু মহুয়া আমাকে বলেছিল যে, হাই কমিশনার ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলতে। আসলে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে যেতে হলে, চিঠিটা লাগবেই।’ এরপর রত্না ঘোষাল মহুয়া রায়চৌধুরীকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। একটু ধৈর্য রাখতে বলেন। কিন্তু ওই যে ধৈর্যের বড় অভাব ছিল মহুয়া রায়চৌধুরীর। যা চাই তা এক্ষুনি চাই!
রত্না দেবী জানিয়েছিলেন, সেই দিন তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে ম’দ্যপান করেন মহুয়া রায়চৌধুরী। এরপর বাড়ি ফিরে আবারও ম’দ্যপান করেন তিনি। তাঁর কথায় ক্ষোভ, রাগ ও অধৈর্যের বশবর্তী হয়ে আ’ত্মহ’ত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। আসলে ম’দ খেলে তাঁর মাথার ঠিক থাকতো না। তবে সবচেয়ে বেদনাদায়ক কি জানেন? রত্না ঘোষাল জানিয়েছেন, এই ঘটনার ঠিক পরের দিনই বাংলাদেশ থেকে চিঠিটা এসে পৌঁছায়। আর সেই চিঠি নিয়ে মহুয়া রায়চৌধুরীকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। কেন এমনটা করলেন তিনি? সদুত্তর পাননি ৯০% শরীর পুড়ে যাওয়া মানুষটার কাছ থেকে। যদিও আজও মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃ’ত্যুকে ঘিরে রহস্য থেকেই গেছে।