বাংলা চলচ্চিত্র ও নৃত্যজগতের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা ‘মমতা শংকর’ (Mamata Shankar) । অভিনয় ও নৃত্যে তাঁর অতুলনীয় অবদান আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী যেখানে রিয়েলিটি শো (Reality show) -এর বিচারকের আসনে বসতে আগ্রহী, সেখানে তিনি সবসময়ই এই প্রস্তাব থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে (Interview) তিনি এই বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন কেন তিনি কখনও বিচারক হতে চাননি।
মমতা শংকর স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি নিজেই নিজেকে বিচার করতে পারি না, অন্য কাউকে কীভাবে বিচার করব?” তাঁর মতে, শিল্পের মূল সৌন্দর্য এর স্বতন্ত্রতায়। প্রতিটি শিল্পীই অনন্য, এবং একজন শিল্পীকে নম্বর বা স্কোরের ভিত্তিতে বিচার করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, “রিয়েলিটি শো গুলি প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে কিন্তু আমার মতে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা না করে নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করা নিজেকে রোজ আরো ভালো করে তোলা সেটাই বেশি জরুরী।” এই কারণেই তিনি কখনও রিয়েলিটি শো-এর বিচারক হওয়ার কথা ভাবেননি।

তিনি আরও বলেন, “আমার মা আমাকে অনেকবার বলেছিলেন বিচারক হওয়ার জন্য, কিন্তু আমি তা পারিনি।” তাঁর মা, কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী সুকুমারী শংকর, চেয়েছিলেন যে তিনি এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে অংশ নিন, কিন্তু মমতা শংকর বিশ্বাস করেন যে শিল্প প্রতিযোগিতার বিষয় নয়, এটি সৃজনশীলতার প্রকাশ। এই কারণে তিনি বিচারকের আসন থেকে দূরেই থেকেছেন। তাঁর মতে, বিচারক হওয়ার জন্য যেসব কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা তিনি কখনও নিতে পারেন না। প্রতিযোগীদের স্বপ্ন ও আবেগকে নম্বরের ভিত্তিতে পরিমাপ করা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ জীবন বাঁচালো পারুল ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা নেই শিরিনের! ফের শুরু কুটনামি! এক হতে পারবে কি পারুল-রায়ান?
হাসতে হাসতে মমতা শংকর বললেন, “আমি বিচার করলে সেটা একেবারে অন্যরকম হতো। কারণ আমি শুধু সেই গতানুগতিক কথা বলতে পারব না—‘তোমাকে দারুণ লাগছে’ বা ‘তোমার এনার্জি লেভেল খুব ভালো’। যদি কোথাও ভুল থাকে, আমি সেটা ঠিক ধরিয়ে দেব, আর যদি ভালো করে, নিশ্চয়ই প্রশংসা করব।তবে একটা ব্যাপার আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না—এই ছোট ছোট মেয়েরা যখন বড়দের মতো মুখভঙ্গি আর অঙ্গভঙ্গি করে নাচে। বাচ্চারা বাচ্চাদের মতোই থাকা উচিত! এরা যেন বনসাই গাছের মতো—একটা ছোট্ট গাছে ফল, ফুল সব আগেভাগেই এসে ঝরে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় তাদের সরলতাটাও হারিয়ে যায়।
তারা ভাবে, ‘আমি তো অনেক বড় কিছু হয়ে গিয়েছি।’ হঠাৎ তারা জনপ্রিয় হয়ে যায়, সবাই বাহবা দেয়, মাথায় তুলে রাখে… কিন্তু যখন বাস্তব জীবনে গিয়ে ঠিকমতো কিছু করতে পারে না, তখন অবসাদে ডুবে যায়। এর ভয়ংকর প্রভাব পড়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।” মমতা শংকর সবসময়ই শিল্পকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে চেয়েছেন এবং নৃত্যশিল্পী হিসেবে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, এটি শিল্পের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধারও প্রতিফলন। বিচারকের আসনে না বসেও তিনি বহু শিল্পীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।