বাংলা বিনোদন জগতে ধারাবাহিকের দাপট একেবারে চোখে পড়ার মতো। সকাল-বিকেল-রাত— প্রতিটি টাইম স্লটেই বাংলা চ্যানেলগুলোতে একের পর এক মেগা সিরিয়াল। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে, বহু অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী এই ধারাবাহিকে কাজ করা নিয়ে মুখ খুলছেন। কেউ কেউ তো আবার স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, আর ফিরতে চান না ছোট পর্দায়। ঠিক এমন সময়েই সম্পূর্ণ উলটো সুর শোনা গেল বাংলা অভিনয় জগতের এক কিংবদন্তি শিল্পীর কণ্ঠে।
সম্প্রতি একাধিক বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ধারাবাহিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁদের মতে, একই রকম চরিত্র, একঘেয়ে গল্প এবং দীর্ঘক্ষণ শুটিংয়ের চাপ— এই সব মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে একরাশ বিরক্তি। অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল, অনামিকা সাহা ও লিলি চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছেন, এখন আর ধারাবাহিকে কাজ করতে মন চায় না। বিশেষ করে লিলি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শুরুতে গল্প আকর্ষণীয় হলেও ধীরে ধীরে তা এমন জটিলতায় গড়ায়, যার কোনও মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ইচ্ছেই হয় না ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে।
এই অবস্থায় ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছেন প্রবীণ অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’-তে। ধারাবাহিকে কাজ করা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ভাল না লাগলেও করতে হবে। যে শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছি, সেখানে কোনও কিছু বাদ দিলে চলে না।” তাঁর মতে, প্রত্যেক শিল্পীরই নিয়মিত দর্শকের সামনে আসা উচিত। না হলে মানুষ ভাববেন, তিনি আর নেই, হারিয়ে গেছেন।
বয়সের ভারে ক্লান্তি থাকলেও সাবিত্রী দেবীর মুখে একটুও বিরক্তি নেই ধারাবাহিক নিয়ে। বরং স্পষ্ট করে জানালেন, “শারীরিক কষ্ট তো হয়। কিন্তু শুটিংয়ে থাকলে মনের কষ্ট হয় না। বরং ভাল লাগে।” অর্থাৎ, শরীর ক্লান্ত হলেও মন আনন্দ খুঁজে পায় অভিনয়ের মধ্যেই। তিনি আরও বলেন, “ক’টা আর ভাল ধারাবাহিক হয়! আগে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু অভিনয় জগতে থাকতে গেলে সব কিছুই মেনে নিতে হয়।”
আরও পড়ুনঃ ঘরে একরত্তি, শুটিংয়ে ব্যস্ত মা! ১৪ ঘণ্টা শুটিংয়ে আধ ঘণ্টা বিরতি, সিসিটিভিই একমাত্র ভরসা! — কীভাবে পাঠাচ্ছেন স্তন্যদুগ্ধ? কেমন করে সামলাচ্ছেন অনিন্দিতা মা এবং অভিনেত্রী জীবন?
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, শিল্পী মাত্রেই এক ধরনের দায়বদ্ধতা থাকে নিজের দর্শকের প্রতি। তাই শুধুমাত্র গল্প ভাল নয় বলে ধারাবাহিক ছেড়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, নিয়মিত পর্দায় দেখা না গেলে, দর্শকের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে যায়। আর একবার সেই সম্পর্ক ছিন্ন হলে, ফিরতে সময় লাগে। সেই কারণেই তিনি এখনও সক্রিয় অভিনয়ে, মনপ্রাণ দিয়ে শুটিং করে চলেছেন।