দীর্ঘ অভিনয়জীবন, অসংখ্য স্মৃতি, অসংখ্য চরিত্র— সবকিছু মিলিয়ে তিনি আজও বাংলা চলচ্চিত্রের অমূল্য রত্ন। জন্ম ১৯৪১ সালের ৮ আগস্ট, আজ তাঁর জীবনের বিশেষ দিন। ৮৩ পেরিয়ে ৮৪-তে পা রাখা এই অভিনেত্রীর দিনটা যেন অন্যরকম উজ্জ্বল। তবে জন্মদিন মানেই কি অতীত স্মৃতিতে ভেসে থাকা? লিলি চক্রবর্তী বলছেন, “আমি পিছনে ফিরে দেখি না, যা গেছে তা স্মৃতি, আমি বরাবর এগিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবি।”
এখন আর বড়সড় আয়োজন হয় না তাঁর জন্মদিনে। এক বোনঝি অফিস থেকে ফিরে কেক কাটেন, কয়েকজন আপনজন আসেন, মিষ্টি খাওয়া হয়— এভাবেই কাটে দিনটা। আগে অবশ্য স্বামী পার্টি দিতেন, আত্মীয়-স্বজনের ভিড় জমত ঘরে। তবে বাইরের কাউকে বা ইন্ডাস্ট্রির কাউকে ডাক দেওয়ার রীতি ছিল না তাঁদের বাড়িতে। পছন্দের খাবারের তালিকায় থাকত পায়েস, পাঁঠার মাংস ও মাছ— বিশেষত মাছের পদ তাঁর কাছে বেশি প্রিয়।
এখন ধারাবাহিকের কাজ থেকে দূরে তিনি। বলছেন, গল্প শুরুর দিকে ভাল থাকলেও পরে সব একই রকম হয়ে যায়, তাই ‘নিমফুলের মধু’ শেষ করে আর সিরিয়াল করেননি। বদলে ছবির দিকে ঝুঁকেছেন— কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী ২’তে কাজ করেছেন। তবে তাঁর অভিযোগ, এখনকার বেশিরভাগ ছবি বয়স্ক চরিত্রদের গুরুত্ব দেয় না। ব্যতিক্রম হিসেবে তিনি বললেন, “পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘এই রাত তোমার আমার’ প্রবীণ দম্পতিকে কেন্দ্র করেই তৈরি।” যাঁরা তাঁর মতো শিল্পীদের গুরুত্ব দেবেন, কেবল তাঁদের সঙ্গেই তিনি কাজ করতে চান।
শিল্পী হিসেবে তাঁর সাফল্যের পিছনে ভাগ্যের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন লিলি। মুম্বইয়ে বসেই সত্যজিৎ রায়ের ছবির ডাক পেয়েছেন, তরুণ মজুমদার তাঁকে ‘ফুলেশ্বরী’তে অভিনয়ের জন্য কলকাতায় ডেকে এনেছেন। কাজের সুযোগের জন্য কখনও কারও কাছে গিয়ে বলতে হয়নি। অথচ তাঁরই স্বীকারোক্তি, “আমার অনেক রোল অনেকে কেড়ে নিতে চেয়েছেন, কেউ কেউ নিয়েছেনও। কিন্তু তাঁরা কি আমার ভাগ্য কেড়ে নিতে পেরেছেন?” প্রযোজক অ্যাডভান্স দেওয়ার পরও চরিত্র হাতছাড়া হয়েছে তাঁর, কিন্তু প্রযোজকেরা টাকা ফেরত নেননি— বরং আস্থা রেখেছেন তাঁর উপর।
আরও পড়ুনঃ ছ’মাসে ২১ কেজি ওজন কমিয়ে অবিশ্বাস্য বদল! নতুন লুকে ফিরে এসে ভক্তদের চমকে দিলেন অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী!
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রদেশে বেড়ে ওঠা লিলির। নান্দীকার নাট্যদলে অভিনয় করা মা, সংসারে সহায়তা করা ভাইবোনেরা— সবার সঙ্গেই ভাগ করেছেন তাঁর প্রথম সাফল্যের আনন্দ। প্রথম পারিশ্রমিক ৫০ টাকা গর্বের সঙ্গে বাবার হাতে তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে শম্ভু মিত্রের বিপরীতে দ্বিতীয় নায়িকা হওয়া— সবই তাঁর যাত্রার অংশ। নিজের স্পষ্ট বক্তব্যে তিনি জানিয়ে দিলেন, “নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন কোনওদিন ছিল না, বরং অভিনেত্রী হয়েই আমি যে সুনাম পেয়েছি, তা অনেক নায়িকাও পাননি।” ভাগ্য, প্রতিভা ও পরিশ্রম— এই ত্রয়ীর জোরেই আজও তিনি বাংলা সিনেমার এক উজ্জ্বল মুখ।