প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের (Tapas Paul) জীবনের প্রথম দিকটা দ্বিধার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। তখন তিনি নিজেই জানতেন না, ঠিক কোন দিকে যাচ্ছেন। সবে অভিনয়ের শুরু। টলিউড তখনও তেমন করে চিনে ওঠেনি তাঁকে। পরিচিতির আলো থেকে তখনও অনেকটাই দূরে তিনি। এমন সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, আড্ডা আর সাইকেল চালিয়ে সময় কাটাতেন। এতটাই স্বাভাবিক ছিলেন, যে বন্ধু যদি প্রশ্ন করত—”তুই কি সিনেমায় অভিনয় করছিস?” তিনি হেসে সেটাই অস্বীকার করে দিতেন। মনে হত, বললেই যদি সবাই জেনে যায়!
একধরনের লজ্জা, আবার কোথাও হয়তো নিজের প্রতি অনিশ্চয়তাও কাজ করত। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠছিল একজন অভিনেতা, যাঁকে পরে গোটা বাংলা মাথায় করে রেখেছিল। তাঁর জীবনে ‘দাদার কীর্তি’ যেন মোড় ঘোরানো ছবি। এই এক ছবিতেই বদলে যায় সবকিছু। হঠাৎ করেই শহরের রাস্তায়, চায়ের দোকানে, সিনেমা-হলের পোস্টারে তাঁর মুখ ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না। পরিচিতরাও বুঝে যান, তাপস এখন আর শুধু পাশের বাড়ির ছেলে নয়, সে পর্দার নায়ক!
মানুষজনের আগ্রহ বাড়তে থাকে, স্কুল-কলেজের সহপাঠীরা, পাড়ার দাদারা সবাই বলতে থাকে—”তুই যে নায়ক হয়ে গেছিস রে!” ততদিনে কিন্তু তাপসের জীবন বদলাতে শুরু করেছে। সাদামাটা জীবনে তখন জুড়ে গেছে অচেনা কৌতূহল, বাড়তি নজর। তবে তারকাখ্যাতি পেলেও, ছাত্রজীবনের দায় তাপস ভুলে যাননি। অভিনয়ের ব্যস্ততার মধ্যে লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সব কিছু সহজ ছিল না। পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় মুখ ঢেকে রিক্সায় যেতেন তিনি। যেন কেউ না দেখে ফেলে।
আজ অবাক লাগে ভাবলে— যিনি একদিন বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন, তিনি একসময় নিজের চেহারাই আড়াল করতে চাইতেন। এই চুপচাপ লড়াইটা হয়তো তখন অনেকেই দেখেননি। কিন্তু এখানেই লুকিয়ে ছিল তাঁর আসল চরিত্র— নাম, যশ, খ্যাতির বাইরে থেকেও নিজের কাজটাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিজ্ঞা! তাপস পালের কেরিয়ার শুরুটা ঠিক এমনই সিনেমার গল্পের মতোই। উল্লেখ্য, একসঙ্গে প্রথম পাঁচটা ছবি করার সময়েও তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন।
তখনকার দিনে সমাজ মাধ্যম না থাকায় কোনও প্রচার ছড়াত না এক লাফে। তাই অভিনয়ের জগতে থাকলেও, চারপাশে সবাই জানত না। এটা তাঁকে একটা বিশেষ স্বাধীনতা দিয়েছিল— নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার, চরিত্র বুঝে কাজ করার, এবং ধীরে ধীরে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার। হয়তো এই সময়টাই তাঁকে পরিণত করেছিল একজন প্রকৃত অভিনেতা হয়ে উঠতে। এরপর আসে সেই সময়, যখন গোটা বাংলা দর্শকদের মুখে একটাই নতুন ভালবাসার নাম—তাপস পাল।
আরও পড়ুনঃ “বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়, অ’কথ্য ভাষায় আক্র’মণ করত!” “শারী’রিক ও মা’নসিক নির্যা’তন, এখন হুম’কি ফোন পাচ্ছি!”— ডান্স বাংলা ডান্সের বিখ্যাত নৃত্যগুরুর বিরুদ্ধে সরব অভিনেত্রী! তিন বছরের সম্পর্কে অসহনীয় নি’র্যাতনের শিকার তিনি!
তাঁর সরল রূপ, দুর্দান্ত অভিনয় আর উপস্থিতি খুব দ্রুত দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। টলিউডে তখন নতুন মুখ নিয়ে নানা আলোচনা। প্রযোজক-পরিচালকরা খুঁজে পাচ্ছিলেন এক ভরসাযোগ্য নায়ক। সেই সাধারণ ছেলেটা, যে একসময় নিজের অভিনয় লুকিয়ে রাখত, সাইকেল চালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাত, সে-ই হয়ে উঠেছিল এক প্রজন্মের জনপ্রিয় মুখ। তাই তাপস পালের গল্পটা শুধু একজন অভিনেতার নয়, বরং এক নরম মাটির মানুষ থেকে তারকা হয়ে ওঠার যাত্রারাও বটে!