বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ ছিলেন ‘রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Rachana Banerjee)। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল দর্শকের একাংশের কাছে ভরসার নাম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থেকে মিঠুন চক্রবর্তী— প্রায় সব বড় নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি। এমনকি বলিউডেও নিজের নাম খোদাই করেছেন, যেখানে তাঁর সহঅভিনেতা ছিলেন অমিতাভ বচ্চনের মতো মহাতারকা। সেই সময়ে কোনও বাঙালি অভিনেত্রীর বলিউডে এই সাফল্য প্রায় স্বপ্নের মতোই ছিল।
তবে রচনার জনপ্রিয়তার আসল শিখরে পৌঁছনোটা কিন্তু ছোট পর্দার হাত ধরেই। বড় পর্দা থেকে দীর্ঘদিন দূরের থাকার পর, ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ সঞ্চালনা শুরু করতেই যেন তিনি দর্শকের ঘরের সদস্য হয়ে ওঠেন। তাঁর মিষ্টি ব্যবহার, সাবলীল উপস্থাপনা আর প্রতিটি প্রতিযোগীর সঙ্গে সহজ যোগাযোগের ভঙ্গি তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ফলে একজন নায়িকা নয়, বরং মানুষ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবেসে ফেলেছিলেন সবাই। সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী অকপটেই জানিয়েছেন, কেন তিনি দূরে ছিলেন পর্দা থেকে।
তাঁর কথায়, বাংলা সিনেমা ছেড়ে তিনি অনেক আগেই দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে পাড়ি দিয়েছিলেন। অভিনেত্রীর নিজের ভাষায়, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিন্তু আমি অনেক আগে চলে গেছিলাম দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি শুধু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আর্টিস্ট নই। আমি যদি শুধু বাংলায় কাজ করতাম, তখন অন্যরকম একটা পরিবেশ হতো। তখন হয়তো মনে হতে পারত আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋতুপর্ণা। কারণ সেই সময় আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না জনপ্রিয় অভিনেত্রী। আমি ১৯৯৫ সাল নাগাদ চলে গিয়েছিলাম কলকাতা থেকে।
কারণ, আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না যে একসঙ্গে হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, তামিলনাড়ু-চেন্নাই, উড়িষ্যা– সব জায়গার কাজ একসঙ্গে করা। এই চারটে ভাষায় কাজ করতে গিয়ে আমি বাংলা এবং কলকাতাকে খুব একটা প্রাধান্য দিতে পারিনি। সত্যি বলতে আমার ওখানে কাজ করতে বেশি ভালো লাগতো। ওখানের পরিবেশ আমার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর লাগতো সেই কারণেই হয়তো অনেক বেশি গ্যাপ দিয়ে ফেলেছি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে।” তাঁর মতে, দক্ষিণের পরিবেশ ছিল অনেক বেশি পেশাদার।
তাই সেখানেই তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। কিন্তু রচনার এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নেটপাড়ায়। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, “ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তই সেরা, আপনার অভিনয়ে অতিরিক্ত নাটকীয়তা আছে।” আবার কেউ লিখেছেন, “অনেক সাউথ মুভি দেখেছি, কিন্তু আপনাকে তো কোথাও দেখিনি!” কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন, “যেই বুম্বাদা আর ঋতুপর্ণার মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে, আপনি সুযোগ বুঝে বাংলায় ফিরে এসেছেন।” তীব্র সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
আরও পড়ুনঃ “না খু’নি, মা’দক ব্যবসায়ী, না করেছি নারী পা’চার…শুধু বিয়ে করে দোষী!” “নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা…সংসার করতে পারেনি, অন্যকে দোষারোপ করে দেবী সাজছে!”— পিঙ্কিকে একসঙ্গে আ’ক্রমণ কাঞ্চন-শ্রীময়ীর?
একজন বলেছেন, “তুমি তো ঋতুপর্ণার মত অলরাউন্ডার অভিনেত্রী নও, তুমি গ্যাপ দিলেও কিছু ক্ষতি হয়নি। বাংলা সিনেমার তোমার ভাষায় জড়তা ছিল।” এমন মন্তব্যেই স্পষ্ট যে, আজও দর্শকের একটা বড় অংশ রচনার পেশাগত সিদ্ধান্তকে সহজভাবে নিতে পারছেন না। তবে অন্য এক অংশের মতে, রচনার সাফল্য অস্বীকার করার উপায় নেই। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের পথ বেছে নেওয়া তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, আর সেই জায়গাতেই তিনি আলাদা। বিতর্ক যাই হোক, বাংলার অনেক মানুষ আজও তাঁকে ‘দিদি’ হিসেবেই ভালোবাসে।
