শীতের ভোরে গ্রামের মেঠো রাস্তা পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটে যাওয়া এক তরুণের ছবি দিয়েই শুরু রৌনক খানের জীবনকাহিনি। দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের চোখে উৎকণ্ঠা আর গর্ব একসঙ্গে। বাস মালিক বাবা, কন্ডাক্টর দাদা আর দুই বিবাহিত দিদির সংসারের ভিড়ে জন্ম নেওয়া ছেলেটি ২০১৩ সালে পাড়ি দিয়েছিল কলকাতায়। লক্ষ্য একটাই অভিনয়। নিজের রান্না নিজে করা থেকে ঘরদোর সামলানো সব কিছুই শিখে নিয়েছিলেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ছিল রৌনকের প্রথম ভালোবাসা। তবে মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল অভিনয়ের জেদ। ইংরেজিতে স্নাতক হয়েও স্বপ্ন ছাড়েননি। পরিবার প্রথমে চিন্তিত হলেও পরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। মডেলিং দিয়ে শুরু পেশাজীবন। কাজের সূত্রে পৌঁছেছিলেন মুম্বইও। সুঠাম চেহারা তাঁকে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় জায়গা দিলেও অভিনয়ের স্বপ্ন তিনি বাংলাতেই বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। তিন ভাষায় সাবলীল এই অভিনেতা জানতেন নিজের জায়গা নিজেকেই তৈরি করতে হবে।
কয়েকটি বিজ্ঞাপনের পর টেলিভিশনের দরজায় কড়া নাড়েন রৌনক। প্রতিশ্রুতি মিলেছিল নায়ক হওয়ার। কিন্তু সে সব আশ্বাস মিলিয়ে গিয়েছিল সময়ের সঙ্গে। হতাশ না হয়ে তিনি বুঝেছিলেন প্রতিভার সঙ্গে যোগাযোগ আর ভাগ্যও দরকার। পরিচিতি না থাকায় পিআর করা সম্ভব হয়নি। তবু ভেঙে পড়েননি। বন্ধুদের সাহচর্য আর পরিবারের ভরসাই তাঁকে লড়াই চালিয়ে যেতে শক্তি দিয়েছে।
ভালো অভিনেতা হতে হলে মঞ্চই সেরা পাঠশালা এই বিশ্বাস থেকেই হাতিবাগানের একটি নাট্যদলে যোগ দেন রৌনক। টানা মঞ্চাভিনয় করেছেন। মডেলিং করে চালিয়েছেন সংসার। এর মাঝেই কখনও জয় জগন্নাথ ধারাবাহিকে মহাদেব আবার কখনও রোশনাইয়ে পার্শ্বচরিত্র। শেষ পর্যন্ত জ়ি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক জোয়ার ভাঁটায় ভানু চরিত্রে নজর কাড়েন। দর্শকের ভালোবাসাই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আরও পড়ুনঃ ননদ-বৌদির হিট জুটি এবার ‘তারে ধরি ধরি মনে করি’তে! পল্লবীর পর, ‘নিম ফুলের মধু’র বর্ষা ফিরছেন ভিন্ন রূপে! শৈলী ভট্টাচার্য যোগ দিলেন জি বাংলার নতুন ধারাবাহিকে! কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি?
পর্দার ভানু যেমন একতরফা প্রেমে ডুবে নিশার জন্য তেমনই কি বাস্তবের রৌনক। এই প্রশ্নে কিছুক্ষণ নীরব থেকেছেন অভিনেতা। তারপর শান্ত গলায় বলেছেন যাকে ভালবাসি তাকে নিয়েই বাঁচি নিজের মতো করে। সহ অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের লড়াই থেকেও তিনি অনুপ্রাণিত। গ্রামের ছেলেটির জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন আজ রুপোলি পর্দার গল্প হয়ে উঠেছে।
