ভারতীয় সংগীতজগতের এক অনন্য নাম শিল্পী ‘কবিতা কৃষ্ণমূর্তি’ (Kavita Krishnamurthy)। আশির দশকের শুরুতে প্লেব্যাকের জগতে পা রেখে তিনি রাতারাতি এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, যে তাঁর কণ্ঠই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে তাঁর পরিচয়। পেশাগত জীবনে সাফল্যের আলো যতটা উজ্জ্বল, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ততটাই নীরব ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাঁর বিশ্বাস ছিল, বিয়ে জিনিসটা বোধহয় তাঁর জন্য নয়! পরিবারের আদরের ছোট মেয়ে হিসেবে নিজের স্বাধীনতাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি, যা ছেড়ে দেওয়ার কথা কখনও ভাবেননি।
তবে সময়ের সঙ্গে মানুষের ভাবনাও তো বদলায়। তেমনই, চল্লিশের কোঠায় পৌঁছে জীবনের সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে গায়িকার। এল সুব্রহ্মণ্যম একজন বিপত্নীক ও তিন সন্তানের বাবা, আগন্তুকের মতো তাঁর জীবনে এসে এমন এক জায়গা তৈরি করেন যে কবিতা নিজেও আগে কল্পনা করেননি। তাঁদের পরিচয়ের সূত্র ছিল কাজ। একসঙ্গে গান রেকর্ড করার সময় ধীরে ধীরে এক ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হয়, যা শুধুই পেশাগত সীমার মধ্যে আটকে থাকেনি।
কবিতার চোখে স্বামী সুব্রহ্মণ্যমের ব্যক্তিত্ব শান্ত, সংযত এবং গভীর বলেই মনে হয়েছিল। তাঁর কাজের ধরন, সংগীত নিয়ে ভাবনা মিলিয়ে কবিতার মনে বিশ্বাস জন্মায় যে এই মানুষটি আলাদা। একসময় সুব্রহ্মণ্যমের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয় তাঁর, সেখানেই প্রথম দেখা হয় তাঁর সন্তানদের সঙ্গে। সেই মুহূর্তেই কবিতা বুঝেছিলেন যে এমন একটা পরিবারই তিনি মনে মনে খুঁজছিলেন! যদিও তিনি নিজে থেকে কিছু বলার পক্ষপাতী ছিলেন না, চেয়েছিলেন সিদ্ধান্তটা আসুক অন্যদিক থেকেই।
যেমনটা তিনি আশা করেছিলেন, কিছুদিন পর সেই প্রস্তাবই আসে। পরিবারের তরফে তখন স্বাভাবিকভাবেই আপত্তি আর দুশ্চিন্তা ছিল। সফল গায়িকা হিসেবে এতদিন অবিবাহিত থাকা, তার ওপর আবার তিন সন্তানের বাবাকে বিয়ে মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল অনেক। মুম্বইয়ের সফল জীবন ছেড়ে বেঙ্গালুরু যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু কবিতা নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন! তাঁর বিশ্বাস ছিল, এত বছর বিয়ে না করার ইচ্ছেটাই যদি ভাগ্যের অংশ হয় তবে এখন বিয়েতে রাজি হওয়াটাও নিশ্চয়ই তেমনই কিছু।
আরও পড়ুনঃ “জবা-পর্ণার থেকে একদম আলাদা, এটাই একজন শিল্পীর খিদে” সংসারী রূপমঞ্জুরি থেকে আধুনিকা দিতি, ‘তারে ধরি ধরি মনে করি’-তে একেবারে অন্য রূপে পল্লবী শর্মা! শ্রীচৈতন্য আখ্যানের আধুনিক ব্যাখ্যায় দ্বৈত চরিত্রে কোন চমক আসছে সামনে? জানালেন অভিনেত্রী!
বিয়ের পর কবিতার জীবনে শুধু একজন জীবনসঙ্গী আসেননি, এসেছে একটি সম্পূর্ণ পরিবার। সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল গায়িকার, যখন বিয়ের প্রথম রাতেই সুব্রহ্মণ্যমের সন্তানদের কাছ থেকে ‘মা’ বলে ডাক শোনা। সেই মুহূর্তকে তিনি আজও জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন। গান যেমন তাঁর জীবনের পরিচয়, তেমনই এই পরিবার তাঁর জীবনের নতুন অর্থ তৈরি করেছে। নিজের ভাষায়, তিনি কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাননি। বরং তিনি পেয়েছেন ভালোবাসায় ভরা একটি সম্পূর্ণ পরিবার!
