বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়কদের তালিকায় একসময় শীর্ষেই ছিলেন ‘চিরঞ্জিত চক্রবর্তী’ (Chiranjeet Chakraborty)। রোমান্টিক চরিত্রে হোক বা অ্যাকশনধর্মী ছবিতে, তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের কাছে আলাদা উত্তেজনা তৈরি করত। বর্তমানে টলিউডের গল্পের ধরণ বদলেছে, তাঁর বড়পর্দায় উপস্থিতিও কমেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার উজ্জ্বলতা এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। রাজনীতি থেকে অভিনয়, দুই মঞ্চেই নিজের জায়গা দখল করে রাখাটা সহজ কথা নয় আর সেই কঠিন কাজটাই তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছেন তিনি।
তবে, তাঁর যাত্রাপথে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে নাম বদলানোকে ঘিরে দর্শকদের কৌতূহল। চিরঞ্জিৎ নামটি টলিউডে ব্র্যান্ডের মতো সামনে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে তাঁর নাম ছিল ‘দীপক চক্রবর্তী’। অনেকেই বলেন যে বাণিজ্যিক ছবিতে যখন সকলের সামনে চিরঞ্জিৎ হাজির হতেন, তখন অন্য ধারার চরিত্রে বা সংবেদনশীল গল্পে যেন দীপকের উপস্থিতি দেখা যেত! সেই দুই পরিচয়ের দোলাচল থেকেই যেন তৈরি হয়েছে তাঁর অভিনয়জীবনের আলাদা মাত্রা।
নাম পরিবর্তনের এই প্রসঙ্গই বর্তমান টলিউডের আরও এক জনপ্রিয় তারকা দেবের (Dev) ক্ষেত্রেও দেখা যায়। তাঁরও আসল নাম ‘দীপক অধিকারী’, কিন্তু দর্শকের কাছে তিনি আজ শুধুই দেব। দুই ক্ষেত্রেই নামই যেন আলাদা পরিচয় তৈরি করেছে। স্টারডমের জন্য নাম কতটা জরুরি, অভিনয় কি নামের ভিতর দিয়ে নতুনভাবে ধরা দেয়? এই প্রশ্নগুলোই যেন বারবার ফিরে আসে। দেবের মতোই চিরঞ্জিতের ক্ষেত্রেও দর্শক ভেবেছেন, নাম বদলানো কি প্রয়োজনীয় ছিল, নাকি শিল্পীকে চিনতে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট নয়?
এই আলোচনার মধ্যে চিরঞ্জিত নিজেই সম্প্রতি এমন কিছু কথা বললেন, যা খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “বাড়িওয়ালী ছবিটা যখন করলাম, তখন ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাকে বলে যে এই ছবিতে চিরঞ্জিৎ নয় দীপক অভিনয় করেছে। তখন আমি বলেছিলাম তাহলে এই ছবিতে অভিনেতার নাম দীপক রাখা হোক! কিন্তু সে আমায় না করে দিয়েছিল। একই ভাবে চতুষ্কোণ ছবিটার সময় সৃজিত মুখার্জী আমাকে বলেছিল যে এই ছবিতে দীপক চিরঞ্জিতকে ছাপিয়ে গেছে। তখনও আমি বলেছিলাম, একবার তাহলে দীপক নামটাকেই সুযোগ দেওয়া হোক!
আরও পড়ুনঃ “আমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নই, লড়াইটা চলছে”— সন্তান হারানোর শো’ক, একের পর এক অপারেশন আর মানসিক ট্রমার সঙ্গে যু’দ্ধে জর্জরিত ইনফ্লুয়েন্সার সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়! কাজে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি
কিন্তু দুজনেই একটা কথা বলেছিলেন যে, ‘দীপক নামটা হলেই সবটা পাল্টে যাবে। এই নামটা বিক্রি-যোগ্য নয়! যে নাম শুনতে কানে লাগে, মনে দাগ কাটে, সেই নামই চিরদিন থেকে যায়।'” এক কথায়, অভিনেতা নিজের উপলব্ধি থেকে বুঝেছেন যে নামের মধ্যে শুধু উচ্চারণ থাকে না, থাকে একধরনের স্মৃতি, পরিচয় আর সময়ের ছাপ। চিরঞ্জিত হয়ে ওঠাটা হয়তো ছিল তাঁর কর্মজীবনেরই এক অধ্যায় আর দীপক রয়ে গেছে ভিতরের মানুষ হিসেবে। দেব বা চিরঞ্জিত, উভয়ের ক্ষেত্রেই নাম যেন শুধু উচ্চারণ নয়, স্বীকৃতির সিঁড়ি।
