একটা ধারাবাহিক বা সিনেমা শুধুমাত্র নায়ক বা নায়িকার গুনেই সমৃদ্ধ বা জনপ্রিয় হয় না পাশাপাশি খলনায়ক বা খলনায়িকার উপস্থিতি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনই ৯০ দশকের বাংলা সিনেমার অবিচ্ছেদ অংশ ছিলেন এই অভিনেতা। পারিবারিক সিনেমাগুলিকে টানটান উত্তেজনায় যিনি ভরপুর করে তুলতেন তিনি হলেন বড় পর্দার ভিলেন সৌমিত্র ব্যানার্জি।
আসলে এখানে সমীকরণটা এমনই যে টলিউড বা বলিউড হোক, সিনেমায় খলনায়কের ভূমিকা যতটা দাপুটে বা যতটা বেশি অত্যাচারী দর্শকমহলে সেটা তত বেশি দাগ কেটে যায়। তাই সৌমিত্র ব্যানার্জির মত খলনায়ক বাংলা সিনেমায় যে কতটা প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন তা বলাই বাহুল্য।
ষড়যন্ত্রকারী, নায়ককে কিল-চড়-ঘুষি মারা, নায়িকাকে বিয়ের জন্য জোর জবরদস্তি করা খলনায়কদের মধ্যে টলিউডের পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন এই অভিনেতাই। পর্দায় তাঁকে দেখলে আজও কেঁপে ওঠে দর্শকরা। নিজের ইমেজটা এমন ভাবেই তৈরি করেছেন সৌমিত্র যে তাঁকে ছাড়া বাংলা সিনেমার খলনায়কের ভূমিকা ভাবাই যেত না একসময়।
বরাবর খলনায়কের চরিত্রে একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে আসা অভিনেতা সৌমিত্র ব্যানার্জিকে তাই নায়কের চরিত্রে কখনোই অভিনয় করতে দেখা গেল না। এমনকি অভিনেতার ইমেজ ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভাবেই যায় সাধারণ মানুষ বিশ্বাসই করতে পারেন না তিনি বাস্তব জীবনে একেবারেই দাপুটে খলনায়কের থেকে আলাদা।
মেদিনীপুরের এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে এমনটাই হয়েছিল অভিনেতার সঙ্গে। অন্যান্য তারপর তো আবার অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে তিনি উপস্থিত ছিলেন অতিথি তালিকায়। এরপর যখন মঞ্চে ওঠেন তখন দর্শকমহলে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। কারণ তারা দেখতে চায় না এমন কোন লোককে যে নায়কের ক্ষতি করে এবং বারবার নায়িকার দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়। কারণ ততদিকে যে গুরুদক্ষিণা, অনুতাপ, অঞ্জলি, অমর প্রেম, আশা ভালবাসা, মঙ্গলদীপ এমন হাজারটা হিট সিনেমা করে ফেলেছেন তিনি।
কিন্তু অভিনেতার শেষ জীবনের পরিণতি খুবই দুঃখদায়ক ছিল। মাদকাসক্ত হয়ে গেছিলেন তিনি। মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরেছিল এই অভিনেতাকে।
কিন্তু অতিরিক্ত মাদকাসক্তি যে নায়ককে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটা নিজে তিনি বুঝতেই পারেননি।
তবে এমনটা চাননি অভিনেতা। পছন্দমত চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি এবং এই আক্ষেপটাই সারা জীবন তাড়া করে বেরিয়েছে সৌমিত্র ব্যানার্জিকে। অবশেষে ২০২০ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু হয় এই অভিনেতা।