বছর চারেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে এক অদ্ভুত উন্মাদনা তৈরি করেছিল একটি ছোট্ট গান—‘কাঁচা বাদাম’। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে সেই গান সব জায়গায় শোনা যেত। ছোট-বড়, তরুণ-বৃদ্ধ সবাই একি সুরে গানটি করেছিল। শত শত রিলস, মিম, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব ভিডিও—সবই যেন ‘কাঁচা বাদাম’কে কেন্দ্র করে ঘুরছিল। সেই সময়ের জনপ্রিয়তার ঝলক আজও অনেকের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তবে প্রশ্ন অনেকের মনে আছে—এই ভাইরাল গানটির আসল স্রষ্টা ভুবন বাদ্যকর কি আজও সেই রকম আলোচনার কেন্দ্রে আছেন, নাকি জীবন বদলেছে পুরোপুরি?
ভুবন বাদ্যকর মূলত একটি প্রান্তিক গ্রামের ছেলে। জীবন সংগ্রামের মাঝেই তিনি কাঁচা বাদাম বিক্রি করতেন। একদিন সেই বাদাম বেচার সময়ে ভুবন গানটি গাইলেন। হঠাৎই কেউ সেটি রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। আর সেই মুহূর্তে ভুবন হয়ে গেলেন ইন্টারনেটে ভাইরাল। গানটি শুধু সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ঘুরল না, বরং টেলি তারকা ও ইউটিউবাররাও সেই গানে নাচ করে রিল বানিয়েছিলেন ।
ভুবন নিজেও ইউটিউবার নিশু তিওয়ারিকে জানান, এই গান তার জীবনের একটি স্বাভাবিক মুহূর্ত থেকে উঠে এসেছে। কেবল বাদাম বিক্রি করার সময় গাওয়া গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকে সে কেবল নিজের সঙ্গেই আনন্দিত ছিলেন। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই গানটি ৫০০ মিলিয়ন ভিউ পায় ইউটিউবে। ছোট্ট গ্রামের ছেলে হঠাৎ দেশজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
সাফল্য এবং ভাইরাল হবার পরও ভুবন আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ সুবিধা পাননি। মুম্বই গিয়ে তিনি কিছুদিন কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন এবং ৬০–৭০ হাজার টাকা পান। সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু আর্থিক সাহায্য এসেছে। কিন্তু গানটির কপিরাইট ও রয়্যালটি অন্যের হাতে চলে যাওয়ায় ইউটিউবের বিপুল ভিউ থেকে কোনো সঠিক অর্থনৈতিক লাভ হয়নি। কেউ কেউ তাকে বড় স্বপ্ন দেখিয়ে চুক্তি করলেও মূল সুবিধা ভুবনের কাছে আসে নি।
আরও পড়ুনঃ ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার আগেই বিপর্যয়, রায়ান-শিরীনের মায়ের ষড়যন্ত্রের জালে পারুলের বাবার জীবন বিপন্ন! মেয়ের সত্য জানার আগেই মিথ্যার ফাঁদে জড়ালেন পারুলের বাবা! ‘পরিণীতা’য় পারুলের নতুন পরীক্ষা!
আজকাল ভুবন আর বাদাম বিক্রি করেন না। ছোট ঝুপড়ি থেকে পাকা বাড়িতে ওঠার পর তিনি গানকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। গ্রামের মানুষ এখনও তাকে চিনে, কিন্তু সেই রাতারাতি জনপ্রিয়তা যেন ধীরে ধীরে থমকে গেছে। তার জীবনের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভাইরাল হওয়া মানেই আর্থিক সাফল্য নয়। ভুবন আজও তার সুর এবং গানকে ভালোবাসেন, তবে সামাজিক মিডিয়ার আলো থেকে দূরে থেকেও তিনি নিজের জীবনকে সহজ সরল ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন।