জনপ্রিয় ‘নবাব’ সিনেমার সেই বিখ্যাত খলনায়ক সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে আছে নিশ্চই। যার একটি বিখ্যাত সংলাপ “মালটাকে গাড়িতে তোল…” এককথায় পরিচিত ছিল সকলের কাছে। ১৯৫৪ সালে হুগলির পান্ডুয়ায় জন্মগ্রহন করেছিলেন অভিনেতা সৌমিত্র বন্দোপাধ্যায়। ১৯৬৪ সালে “সুভা ও দেবতার গ্রাস” ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র। এরপর দীর্ঘদিন তাকে পর্দায় না দেখা গেলেও ১৯৮২ সালে ‘ত্রয়ী’ ছবির মাধ্যমে আবারও অভিনয়ে ফেরেন সৌমিত্র। তাঁর অভিনয় ছিল এতই প্রাকৃতিক যে ঘরের মা বৌরা রীতিমতো ভয় পেতো তাকে।
সৌমিত্র ব্যানার্জী বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক উল্লেখযোগ্য খলনায়ক, যিনি তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তার চরিত্রে গভীরতা ও প্রভাব তৈরি করার ক্ষমতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। যদিও পর্দায় তিনি দুর্ধর্ষ ও দুঁদে খলনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন একেবারেই ভিন্ন।
সৌমিত্র ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি প্রকাশ্যে আলোচনা হয়নি, তবে কিছু প্রতিবেদন ও সহকর্মীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন একজন আন্তরিক ও সহজ-সরল মানুষ। তিক্ত দাম্পত্য জীবনের গুঞ্জন শোনা গেলেও, তিনি কখনোই তা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেননি। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট এবং ব্যর্থতা গুলোকে আড়াল করে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে গেছেন।
পর্দায় ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করলেও তার মনেপ্রাণে ছিল নায়ক হওয়ার স্বপ্ন। অভিনয়ের পাশাপাশি দারুন গান গাইতেন সৌমিত্র। তিনি কখনো ভাবেননি অভিনয় জগতে আসবেন, বরং গানের জগতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার কন্ঠে ফুটে উঠত কিশোর কুমারের গান, যে কারণে পাড়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গানও গাইতেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ “নায়িকা বা পার্শ্ব চরিত্র ম্যাটার করে না, ভালো অভিনয় করতে পারলেই দর্শক পছন্দ করেন”- ১৪ বছরের অভিনয় জীবনে উপলব্ধি পর্দার নিপার
অভিনয় জগতের আরেক শিল্পী অভিনেত্রী রিতা কয়রালকে বিয়ে করেছিলেন সৌমিত্র। কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবন মোটেই সুখের হয়নি। অল্প দিনেই বিচ্ছেদ হয়েছিল তাদের। মদ্যপান নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, তার সহকর্মীদের মতে, তিনি কখনোই তার পেশাগত কাজে তার ব্যক্তিগত অভ্যাসের প্রভাব পড়তে দেননি। অভিনয় ছিল তার প্রথম এবং প্রধান ভালোবাসা। তিনি তার জীবনকে অভিনয়ের প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন এবং তার অসংখ্য চরিত্র আজও দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে।