বাংলার চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন জগতের একজন জনপ্রিয় কৌতুক শিল্পী হলেন বিশ্বনাথ বসু। তাকে আমরা বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি। বহু বছর ধরে বাংলার দর্শককে মন খুলে হাসিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে তিনি যে কতটা সংবেদনশীল তা কাউকেই বুঝতে দেয় না এই অভিনেতা। অভিনেতারা এমনই হয় বাস্তব জীবনে সে কেমন তা বুঝে ওঠার আগেই দর্শকরা তাকে ক্যামেরার সামনে যেভাবে দেখে সেটিকেই ধরে নেয়।
কিন্তু এমন কিছু ঘটনা অভিনেতাদের সাথে ঘটে থাকে যেগুলোর মাধ্যমে তারা বাস্তবে কেমন তা বেরিয়ে আসে। এমনই কিছু ঘটনা ঘটলো অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর সাথে। প্রসঙ্গত অভিনেতার গ্রামের বাড়িতে প্রতিবছরই ধুমধাম করে হয় মা দুর্গার আরাধনা। তাই পুজোর কটা দিন শহরে জীবনযাত্রা ছেড়ে তিনি গ্রামেই কাটান নিজে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। এ বছরও তার অন্যথা হবে না কিন্তু গ্রামে যাওয়ার আগে প্রতিবছরই মহালয়া দিন তর্পণ সারেন কলকাতায়। কিন্তু এইবারের তর্পনের ঘাটে গিয়ে তার সঙ্গে এমন এক ঘটনা ঘটলো যার কথা তিনি এক সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করলেন।
বিশ্বনাথ বললেন, ‘মহালয়ার ভোরেই আমার দুর্গার দেখা পেলাম। হাওড়ায় আমার শ্বশুরবাড়ি। সেখানকার গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করি। পুজোপাঠ সেরে ঘাটে উঠতেই দেখে গুটিসুটি এক ‘মা’ বসে রয়েছেন। জরাজীর্ণ শরীরে শতছিন্ন শাড়ি। নিজেকে বয়ে নিয়ে চলার শক্তি নেই। ঘোলাটে চোখে যেন শেষ পাড়ানির কড়ি খুঁজছে। অনেকটা থানার এক পাশে পড়ে থাকা ভাঙাচোরা সাইকেলের মতো। হয়ত তার থেকেও খারাপ অবস্থা। কে জানি অবহেলায় ফেলে রেখে গিয়েছে তাঁকে। এ ভাবে মহালয়ার ভোরে দেবীর দেখা পাব, ভাবতেও পারিনি।’
‘দর্শন যখন দিলেনই তখন তো তাঁর নৈবেদ্যও প্রাপ্য। সাধারণত, কাউকে কিছু দিয়ে সেটা নিয়ে বড়াই করি না। এতে যিনি দিচ্ছেন এবং যিনি নিচ্ছেন— উভয়েই খাটো হয়ে যান। আজ জানাচ্ছি। কারণ, আমার দুর্গাকে আমার মতো করে আরাধনা করে আমি তৃপ্ত। পকেটে সামান্য যা ছিল তাঁর হাতে গুঁজে দিলাম সবার অলক্ষ্যে। অস্ফুটে বললাম, ‘মা বাকি দিনগুলোও তো চলতে হবে। তোমার ছেলে তাই তোমায় সামান্য কিছু দিয়ে গেল। ঝটপট আঁচলে বাঁধো। সামলে রেখো।’ আমার কথা তাঁর কান পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা সন্দেহ। আমি বাড়ির পথ ধরলাম।
তিনি জানান, ‘বাংলার ঘরে ঘরে ‘আমার দুর্গা’রা ছড়ানো। আমাদের চোখ নেই। তাই দেখেও দেখি না। আমিও তাই কোনও এক জনের কথা বলব না। আমার তালিকাটাও বেশ বড়। ‘আমার দুর্গা’রা পথে পথে কাটান। সবাই তাঁদের ফুটপাথবাসিনী বলেন। পথেই সংসার, পথেই দশভূজা তাঁরা। গাড়িতে বসে দেখি, দুই হাতে রান্নার পাশাপাশি সন্তান আগলাচ্ছেন। পরিপাটি করে স্বামীকে হয়ত ভাত বেড়ে দিচ্ছেন। রাতে পথের এক ধারে আরামের শয্যা পাতছেন। কী ভাবে চলে এঁদের? কেউ খোঁজ নেয় না।’