বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আরতী ভট্টাচার্য। যাকে বহু জনপ্রিয় পরিচালক এবং অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গেলেও একটা সময় পরে আর টিভির পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়নি তাকে। কিন্তু কেন এই অসাধারণ অভিনেত্রীকে হারিয়েছিল বাংলা, আজ সেই আরতি ভট্টাচার্যের অভিনয়ের শুরু এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই কথা বলা হলো।
প্রসঙ্গত আরতি ভট্টাচার্য ১৯৫৯ সালের ৮ ই নভেম্বর ভারতের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল তিনি বড় হয়ে ডাক্তার হবেন কিন্তু ধীরে ধীরে সেই আশা পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে স্কুলের ড্রামা কম্পিটিশনে বছরের পর বছর সুন্দর অভিনয়ের জন্য ফাস্ট প্রাইস এবং প্রশংসা পেতে পেতে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন তিনি। তারপরে কলেজের একটি নাটকে আরতি দেবীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাকে প্রথম কলকাতায় এসে থিয়েটারে যোগ দেওয়ার কথা বলেন। তারপরে মায়ের হাত ধরে মামার বাড়ি চুঁচুড়াতে আসেন সেখান থেকে কলকাতায় এসে অভিনয় জীবনে পা।
সেখানে এসে সত্য বন্দোপাধ্যায়ের নাটক ‘নহবতে’ নায়িকার চরিত্র কেয়ার ভূমিকায় অভিনয় করে সকলের মন জিতে নেন অভিনেত্রী আরতী ভট্টাচার্য। পরে মৃণাল সেনের হিন্দি ছবি ‘এক আধুরি কাহানি’তে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল উত্তম কুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনীত ‘স্ত্রী’ ছবিটি । যে ছবিটিতে উত্তম কুমার ও সৌমিত্রের মতো তাবর তাবর অভিনেতার মধ্যেও নিজের অভিনয় গুনে দর্শকের নজর কেড়েছিলেন আরতি দেবী। পরে একের পর এক জনপ্রিয় ছবিতে কাজ করেছেন তিনি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পিকনিক’, ‘আলো-আঁধারে’, ‘প্রেমের ফাঁদে’, ‘জাল সন্ন্যাসী’, ‘আমি সে ও সখা’, ‘জন অরণ্য’, ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রভৃতি।
তারপরে দীর্ঘ ১০ বছর বহু জনপ্রিয় ছবিতে কাজ করে নিজের অভিনয়ের গুণে মুগ্ধ করেছেন দর্শককে। কিন্তু তারপরে আস্তে আস্তে অভিনয় জীবন থেকে সরে গেলেন তিনি। ১৯৮২ সালে ভোজপুরি নায়ক কুনাল সিংকে বিয়ে করে মুম্বাইতে গিয়ে সংসার পাতেন আরতি ভট্টাচার্য। ১৯৮০ সালে ‘কাল হামারা হে’ হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে কুনাল সিং এর সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার। বিবাহের পরে বাংলা অভিনয় জীবনকে ছেড়ে দিলেও নিজের প্রোডাকশন হাউস খুলে কয়েকটি হিন্দি এবং ভোজপুরি সিনেমার প্রযোজনা করেছেন তিনি। তবে একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন তিনি আর কখনোই অভিনয় জীবনে ফিরে আসতে চান না। নিজের সংসার নিয়ে তিনি ব্যস্ত এখন। তার ছেলে আকাশ সিং এখন ভোজপুরি সিনেমার নায়ক। তবে তিনি বাংলার অভিনয় জীবনকে ছেড়ে দিলেও বাংলার দর্শক তাকে যুগের পর যুগ একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসাবেই মনে রাখবে।