বাংলার প্রথম মহিলা সুপারস্টার তাঁকেই বলা যায়। আসলে আক্ষরিক অর্থেই মহানায়িকা তিনি। এক অদ্ভুত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অভিনেত্রী ছিলেন সুচিত্রা সেন। এই মানুষটাকে বাঙালি ভগবানের আসনে বসালেও আসলে ভীষণভাবে রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন তিনি।
অসামান্য সৌন্দর্যে, তুমুল ব্যক্তিত্ব, সুঅভিনয়ের আধার ছিলেন এই অভিনেত্রী। তাঁকে টপকাতে পেরেছে এমন অভিনেত্রী বোধহয় বাংলা সিনে দুনিয়ায় আর আসেনি। তিনি ছিলেন সর্ব মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আসলে তাঁর সঙ্গে অন্য কারর তুলনা টানার স্পর্ধাই কোনদিন কেউ দেখাতে পারেনি।
আদতে বাংলাদেশের পাবনায় বাস ছিল সুচিত্রা সেনের। পিতৃদত্ত নাম রমা দাশগুপ্ত। অভিনেত্রী নিজেও কি কখনও ভেবেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র দুনিয়ার মহানায়িকা হয়ে উঠবেন তিনি। দেশভাগের উত্তাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে আসে রমার পরিবার। ছোট থেকেই তীব্র সুন্দরী রমা। আর তাই রূপের গুণেই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় উচ্চবিত্ত সেন পরিবারে।
শিল্পপতি আদিনাথ সেনের এক নজরেই পছন্দ হয়ে যায় রমাকে। বিলেত ফেরত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে মহা ধুমধামে রমার বিয়ে দেন তিনি। ছোটবেলায় পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও বেশি দূর পড়াশোনা করে ওঠা হয়নি রমা ওরফে সুচিত্রা সেনের। তার সেই ইচ্ছে পূরণ করেন দিবানাথ। বিলিতি আদব-কায়দা শেখানো থেকে বাঙাল টান বর্জন করে স্পষ্ট বাংলা ভাষার উচ্চারণ, ইংরেজি শিক্ষা দিবানাথের হাত ধরে ঝকঝকে হয়ে ওঠেন রমা।
অনেক গুঞ্জন শোনা গেলেও সুচিত্রার প্রতি দিবানাথের যে অমোঘ আকর্ষণ ছিল তা বিভিন্ন সময়ে সুচিত্রা সেনের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। যদিও পরে দিবানাথের ধার দেনা সুচিত্রাকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল স্টুডিও পাড়ায়।
পরবর্তীতে শ্বশুরমশাই আদিনাথের এখ আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেলেও সেই সিনেমা মুক্তি পায়নি। ইতিমধ্যেই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় রমার নতুন নাম দিলেন ‘সুচিত্রা’। আর এই নামেই যেন নবজন্ম হল রমার। সৃষ্টি হল ভবিষ্যতের মহানায়িকার।
জানা যায়, সংসার করতে চেয়েছিলেন সুচিত্রা। এই দম্পতি চাইতেন তাঁদের জীবনে যেন একটি পুত্র সন্তান আসে আর তেমনটাই হয়েছিল। বিয়ের এক বছর পরে জন্ম হয় এক পুত্র সন্তানের। কিন্তু অকালেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায় সে। ছেলের মৃ’ত্যুর জন্য সবাই দুষে ছিল রমাকে। পরবর্তীতেৎজন্ম হয় এক কন্যাসন্তানের। ফুটফুটে সেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন শ্রীমতি। আর ডাকনাম মুনমুন। যদিও সেই ডাক নামেই পরিচিতি পেলেন তিনি।
জানা যায় সুচিত্রা সেনের বালিগঞ্জের বাড়ির দিকে নজর ছিল তাঁর আত্মীয়দের। আর তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন মুনমুন। এমনকি আদালত পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন সেই আত্মীয়রা। যদিও শক্ত হাতে হাল ধরেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু না সম্পর্ক ভাঙেননি কারর সঙ্গেই। নিজের স্বভাবগুণে ক্ষমা করেছিলেন তাঁদের। আসলে তাঁর ব্যক্তিত্বের বেশিক্ষণ সামনে টিকে থাকার ক্ষমতা কারর ছিল না। আর তাই তিনি বলতেন আমি একা নই আমি নিঃসঙ্গ।