জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

এক ভক্তের বই উপহার, আরেকজন করলেন চটি খুলে নমস্কার!— জীবনের সবচেয়ে দামি মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণায় আবেগপ্রবণ বিশ্বনাথ! এক ভক্ত অভিনেতার মায়ের কাছে দীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন! দু-দশকের অভিনয় জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কি বিশ্বনাথের?

অভিনয়ে কেটে গেছে দু-দশকেরও বেশি! জনপ্রিয় অভিনেতা ‘বিশ্বনাথ বসু’ (Biswanath Basu) আজ ফিরে দেখলেন তাঁর দীর্ঘ সফর। ব্যারাকপুরে বন্ধুদের সঙ্গে থাকার সময় থেকেই শুরু হয় অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। ছোট শহরের ছেলের টলিউডে (Tollywood) আসার যাত্রাটা সহজ ছিল না, কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর নিষ্ঠা তাঁকে আজ এইখানে এনে দিয়েছে। ২০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন, কাজ করেছেন বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে। তবু এত কিছুর মধ্যেও তিনি যেন একইরকম সরল, একইরকম আন্তরিক। সম্প্রতি এক পডকাস্ট শো-তে এসে বিশ্বনাথ খোলাখুলি ভাগ করে নিলেন নিজের অভিজ্ঞতা।

তাঁর কথায় উঠে এল সাফল্যের নেপথ্য গল্প, উঠে এল আফসোসের কথাও। তাঁর জীবনের একমাত্র না-পাওয়ার নাম তরুণ মজুমদার। সেই কিংবদন্তি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ না পাওয়া তাঁর কাছে এখনো তীব্র আক্ষেপের জায়গা। বর্ষীয়ান পরিচালকের ছবির চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে দেখতেন তিনি, তাই কাজের ইচ্ছেও গভীর ছিল। গ্রামের সন্তান বলেই হয়তো গ্রামের মানুষের মন বুঝতে পারেন এত সহজে। বিশ্বনাথ বলেন, এ রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই গ্রামে থাকেন।

তাই অভিনয় করতে গিয়ে তাঁদের অনুভব, জীবনযাত্রা ও ভাবনাকে আত্মস্থ করতে পেরেছেন সহজে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ ছিল তাঁর। তবে ‘শত্রু’ সিনেমাটা দেখার পর সেই আকর্ষণ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। বাড়িতে সেই সিনেমা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জন্ম নেয় অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর কাটিয়ে তাঁর বিশ্বাস, দক্ষতা থাকলে কেউ কাউকে আটকে রাখতে পারে না। ভালো কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে একদিন সময়ও ঠিক সঙ্গ দেয়। তিনি বলেন, “আমি যখন টালিগঞ্জে আসি, একটাই লক্ষ্য ছিল— অভিনয় করব।

বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আমার পরিবার, তাকেই আগলে রাখব। কেউ ইন্ডাস্ট্রিকে আঘাত করলে, আমি দাঁড়াব বুক চিতিয়ে।” এদিকে অনুরাগীদের সঙ্গে কাটানো একের পর এক মধুর মুহূর্ত যেন আজও হৃদয়ে গেঁথে আছে অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর। আবেগতাড়িত হয়ে সেই স্মৃতিগুলিই ভাগ করে নিলেন তিনি। চোখ ভিজে আসে তাঁর—স্মরণ করেন, একবার দীঘায় শো করতে গিয়েছেন, চা হাতে এক ছেলেকে এগিয়ে আসতে দেখেন। হঠাৎ করে সে নিজের চটি খুলে নমস্কার করে তাঁকে! এ ঘটনায় অভিভূত হয়ে পড়েন বিশ্বনাথ।

আরেকবার মুম্বই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার সময় এক বিদেশি ভক্তের সঙ্গে পরিচয়। তিনি এসে বলেন, “আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে, সেটা প্রমাণ করতে চাই।” বলেই একটি বই উপহার দেন। বিশ্বনাথ আরও জানান, দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “মা বলতেন, এক থালা ভাত খেয়ে হজম করতে পারিস, আর লোকের দুটো কথা হজম করতে পারিস না?”

এই কথা শুনে এক দর্শক নাকি জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বনাথের মায়ের কাছ থেকে দীক্ষা নিতে চান! এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা আর আন্তরিকতা তাঁকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, তিনি কেবল একজন অভিনেতা নন, বরং মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেওয়া এক প্রিয় মুখ। বিশ্বনাথের কথায়, “ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর জোহর রায়ের দেশে আমি যা পেয়েছি, তাতে আজ মরে গেলেও কোনও দুঃখ থাকবে না।”

Piya Chanda