একজন বাবা হিসেবে মেয়ের প্রতিটি ছোট ছোট সাফল্যই ‘কিঞ্জল নন্দ’র (Kinjal Nanda) চোখে অমূল্য। এ বছরের রথযাত্রার দিন মেয়েকে নিজে হাতে রথ টানতে দেখে যেন আবেগে ভাসলেন চিকিৎসক তথা অভিনেতা। মেয়ের বেড়ে ওঠা যেন চোখের পলকে ঘটে যাচ্ছে, সেই অনুভূতি ভাগ করে নিতে গিয়ে কিঞ্জল বললেন, “এই তো সেদিন জন্মাল, আর এখন নিজেই রথ টানছে!” সন্তানের প্রতিটি বিকাশে কিঞ্জলের আনন্দ যেমন আছে, তেমনি কোথাও একটা চিন্তার রেখাও ফুটে উঠেছে তাঁর কণ্ঠে।
এই চিন্তার পেছনে রয়েছে সমাজের বর্তমান বাস্তবতা। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজ চত্বরে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার ঘটনা কিঞ্জলকে রীতিমতো বিচলিত করেছে। মেয়েকে আত্মরক্ষা শেখানো যে এখন সময়ের দাবি— তা মেনে নিয়েই কিঞ্জল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর কন্যাকে বড় হলে পাঠাবেন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণে। এজন্য তিনি ইতিমধ্যেই শিবায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি একজন অভিজ্ঞ মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক।
কিঞ্জলের কাছে এটি কেবল নিরাপত্তার জন্য নয়, মেয়েকে সাহসী ও আত্মনির্ভর করে তোলার প্রাথমিক পদক্ষেপও। এই ভাবনার সঙ্গে জুড়ে আছে এক তীব্র যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা। বছর খানেক আগেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া নারকীয় ধর্ষণকাণ্ড আজও ভুলতে পারেননি কিঞ্জল। সেই সময়ও তিনি সহপাঠীদের নিয়ে রাতের পর রাত জেগে পথে নেমেছিলেন প্রতিবাদে। ধর্নামঞ্চে আওয়াজ তুলেছিলেন ন্যায় বিচারের।
আর আজ, ঠিক দশ মাস পরে যখন ফের শহরের অন্য এক কলেজে সেই একই রকম বিভীষিকা, তখন কিঞ্জলের প্রশ্ন, এত লড়াই, এত চেষ্টা কি ব্যর্থই রয়ে গেল? এই প্রশ্ন শুধু তাঁর একার নয়, গোটা সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষের কাছে। তিনি বলছেন, “আমরা পথে তো নামি, প্রতিবাদও করি, কিন্তু সমাজ কি কিছু শিখছে?” কিঞ্জলের চোখে আজকের সমাজ যেন বারবার সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
আরও পড়ুনঃ “আমাদের যুগের শ্রেষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রী ওরা”— পুরনো সহকর্মীদের নিয়ে আবেগপ্রবণ প্রসেনজিৎ! জনপ্রিয়তার চূড়ায় থেকেও, তাপস পাল আর দেবশ্রী রায়কে এখনও সেরা মনে করেন বুম্বা!
তাঁর সেই হতাশার সুর যেন সমাজের নিষ্ক্রিয়তাকে প্রশ্ন করছে। এই প্রেক্ষাপটে যৌনশিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন কিঞ্জল। তাঁর মতে, এখনও সরকারি স্কুলগুলিতে যৌনতা সংক্রান্ত শিক্ষা চালু হয়নি, অথচ সেটি কতটা প্রয়োজনীয় তা এইসব ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিঞ্জলের স্পষ্ট মত, যতদিন না পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, ততদিন অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেককেই ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন আচরণ সম্মানজনক আর কোনটা নয়।