টলিউডের দর্শকের কাছে কিছু মুখ এমন থাকে, যাদের অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায়, কিন্তু কারণটা ঠিক জানা থাকে না। ছোট বয়সে যাঁদের অভিনয় দেখে বড় হওয়া, হঠাৎ একদিন পর্দা থেকে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। রিমঝিম গুপ্ত তেমনই এক নাম। এক সময় ধারাবাহিক থেকে বড় পর্দা—সবখানেই যাঁর সাবলীল উপস্থিতি চোখে পড়ত, আজ তিনি অনেকটাই লাইমলাইটের বাইরে। কিন্তু এই দূরে সরে যাওয়ার পেছনে ছিল এমন কিছু অধ্যায়, যা তিনি নিজেও বেছে নেননি।
অভিনেত্রী মৌমিতা গুপ্তের মেয়ে রিমঝিম গুপ্ত ছোট বয়স থেকেই অভিনয়ের জগতে পরিচিত মুখ। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। নায়িকা চরিত্র হোক বা নেগেটিভ শেড—দু’ধরনের ভূমিকাতেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। টলিউডের একাধিক সফল ছবিতে কাজ করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছিলেন রিমঝিম। তাপস পাল, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়া তাঁর কেরিয়ারের বড় প্রাপ্তি। ‘তিল থেকে তাল’, ‘পিতা’, ‘মাটি ও মানুষ’, ‘হাউসফুল’, ‘কুলি’, ‘বারুদ’, ‘ভাল থেকো’, ‘বেদেনি’, ‘হলুদ পাখির ডানা’, ‘মায়া’, ‘কাল মধুমাস’—এই তালিকাই বলে দেয়, একসময় কতটা ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই ব্যস্ততার মাঝেই আচমকা থমকে যায় সব কিছু। এক সাক্ষাৎকারে রিমঝিম নিজেই জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করলেও মুম্বইয়ে একটি ছবির ডাবিং করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসায় ধরা পড়ে ওভারি সিস্ট, দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। অপারেশনের পর টানা প্রায় এক বছর তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় কাজ থেকে দূরে সরে যান অভিনেত্রী, আর সেই বিরতিই তাঁর কেরিয়ারে বড় ফাঁক তৈরি করে।
এর পর ব্যক্তিগত জীবনেও আসে বড় পরিবর্তন। ২০১৫ সালে বিয়ের পর পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে অভিনয় আরও কিছুটা পিছনে চলে যায়। অসুস্থতার ধকল, ওজন বৃদ্ধি এবং নতুন করে শারীরিক সমস্যার কারণে লাইমলাইটে ফেরা সহজ ছিল না। তবু অভিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি ছিন্ন হয়নি। ছোট পর্দায় ‘রইলো ফেরার নিমন্ত্রণ’, ‘জিয়নকাঠি’, ‘সুন্দরী’, ‘উমা’, ‘আলোর ঠিকানা’র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে বিভিন্ন সময় তাঁকে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আসানসোলে পা দিয়েই ভাঙল উজির সংযম, বাবার জমিতে দাঁড়িয়ে সত্যের খোঁজে সে! মুহূর্তেই কেঁপে উঠল চারিদিক, ভিত পুজোর বিস্ফো’রণে মৃ’ত্যুর মুখে ঋষি! ‘জোয়ার ভাঁটা’য় নিশার হিংসায় মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে গেল সবকিছু!
আজ হয়তো আগের মতো নিয়মিত কাজ নেই, কিন্তু অভিনয়ই রিমঝিম গুপ্তর প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা। সময়ের সঙ্গে নিজেকে নতুন করে তৈরি করার চেষ্টা তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বাস রাখেন, সুযোগ এলে আবারও দর্শকের সামনে ফিরবেন। পর্দার আলো থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও, অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এক মুহূর্তের জন্যও কমেনি—এই বিশ্বাসই তাঁকে এগিয়ে চলার শক্তি দেয়।
