বাংলা সংস্কৃতির বহু পুরনো একটি আচার হল ঝুলন যাত্রা। আর সেই আচারকেই কেন্দ্র করে পরিচালক ‘তথাগত মুখোপাধ্যায়’ (Tathagata Mukherjee) এর নতুন ছবি ‘রাস’ (Raas) । শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বা লোকাচার নয়, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক ফিরিয়ে আনতে চাইছেন বাঙালির হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য, পারিবারিক মেলবন্ধন আর একান্ত নিজস্ব অনুভবের জগৎকে। প্রথমে ছবির নাম ভেবেছিলেন ‘ঝুলন’। তবে পরে নাম বদলে রাখা হয় রাস, কারণ এই শব্দটার সঙ্গে বাঙালির আত্মিক সংযোগ অনেক গভী
শুধু ধর্মীয় নয়, ‘রাস’ শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রেম, আকাঙ্ক্ষা, টানাপোড়েন এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব, যা এই ছবির মূল আবহ। তথাগত মনে করেন, বাঙালির কাছে ‘রাসলীলা’ মানেই প্রেমের এক রসালো উপাখ্যান। তবে তার ছবির প্রেম কিন্তু বাইরের গ্ল্যামারে মোড়া কোনও গল্প নয়, বরং প্রেমের পরত এখানে অনেক গভীরে। এই প্রেমে নেই শরীরী চাহিদা, আছে মন ছুঁয়ে যাওয়া স্পর্শ, চোখে চোখে কথা বলা, এবং চুপ করে পাশে থাকার ক্ষমতা।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার ও রণজয় বিষ্ণু, এই তিন চরিত্রের মধ্যে রয়েছে সেই পুরনো দিনের নরম প্রেম, যা আজকের দিনে প্রায় বিলুপ্ত। এই ছবিতে নারীর অবস্থান বেশ উচ্চতর। তথাগত মনে করেন, তাঁর ছবির নারী চরিত্ররা মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে পুরুষদের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। ফলে প্রশ্ন উঠে যায়—রাসলীলা কে করল? কৃষ্ণ না রাধা? তথাগত বলেন, তিনি শুধু প্রেমের কাহিনি বলতে চান না, বরং সম্পর্কের কাঠামোতে লুকিয়ে থাকা সমাজের মানসিকতাকেও তুলে ধরতে চান।
‘রাস’ ছবির মুক্তির আগেই সবচেয়ে বেশি চর্চায় পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় নিজেই। এদিন এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি প্রশ্ন করা হল তাঁকে—শ্রীকৃষ্ণের মতোই কি তিনিও বহুগামী? তথাগত অবশ্য এই তুলনায় অস্বস্তি বোধ করেন না। উল্টে বলেন,” কৃষ্ণ বহুগামী হতে পারেন, কিন্তু আমি সেটা নই। আমার কাছে প্রেম আলাদা।” প্রেম মানে কি তাঁর কাছে? উত্তর এড়িয়ে গেলেন না। বরং সম্পর্ক আর প্রেম নিয়ে বললেন, সম্পর্ক মানে একটা ‘ন্যাড়া ছাদ’। যেখানে হাওয়া চলাচল করতে পারে, আর মানুষ নগ্ন হতে পারে—মন দিয়ে, চিন্তা দিয়ে। যেখান থেকে প্রশ্ন আসে না, বরং গ্রহণযোগ্যতা মেলে।
আরও পড়ুনঃ “অনেক বছর ধরেই আমার একটা বাবু দরকার!”— ঋতাভরীর অকপট স্বীকারোক্তি! কেমন বাবুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি?
এমন এক ‘প্রিয়জন’, এমন এক ‘বাড়ি’র খোঁজেই মানুষ নাকি ঘুরে বেড়ায়! এই কথাগুলো শুনে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটা কি নিজের জাস্টিফিকেশন? আর এখানেই শুরু বিতর্ক। কেননা রাস ছবির প্রেক্ষাপট নিজেই পরিচালকের জীবনের ছায়া কি না, সেই প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ছবিতে যেমন তিনটি চরিত্র—বিক্রম, দেবলীনা ও রণজয়, এক জটিল প্রেমে জড়িয়ে, তেমনি তথাগতর জীবনেও একাধিক সম্পর্ক, একাধিক অধ্যায়! সদ্যই দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে বয়সের অর্ধেক প্রেমিকা ‘আলোকবর্ষা’কে মন দিয়েছেন। ভবিষ্যৎই বলবে এই সম্পর্কের ভিত্তি কতটা শক্ত!