বয়স তাঁর ৯০ বছর! শরীরের শক্তি কমলেও গলার সুর এখনও হারায়নি। কাঁপা কাঁপা হাতে বাজনা বাজিয়ে পথে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে চলেছেন এক প্রবীণ শিল্পী (Famous Singer)। পেট চালাতে হবে তো, তাই আর কোনো উপায় নেই। বীরভূমের মাটিতে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি নিজের গান দিয়েই এক সময় ছুঁয়ে গিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতার মন। আজ তিনিই বিস্মৃতির অন্ধকারে। আলোটা কেড়ে নিয়েছে অন্য কেউ।
তাঁর গান বাজে বিয়েবাড়িতে, উৎসবে, স্টেজে। কিন্তু যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই গান, তিনিই যেন অদৃশ্য। তিনি আর কেউ নন, ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানের মূল রচয়িতা ‘রতন কাহার’ (Ratan Kahar) । আজও যাঁর গাওয়া ভাদু গান রক্ষায় বদ্ধপরিকর তিনি নিজে। অথচ তাঁর নামটুকু কেউ মনে রাখে না। গানের জগতে লাইমলাইটে আজও রয়েছেন অনেক শিল্পী, যাঁরা তাঁর সৃষ্টি দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন।
কিন্তু রতনের ভাগ্যে জোটেনি ন্যূনতম স্বীকৃতিটুকুও। এক সময় পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। কিন্তু পুরস্কারের মেডেল বা সার্টিফিকেট দিয়ে তো আর ওষুধ কেনা যায় না। তাঁর মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকার ওষুধের খরচ, যা জোগাড় করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তিনি সাহায্য চান না, বলেন, “হাত পাততে পারি না।” শিল্পের মর্যাদা যেন তাঁকে মাথা উঁচু করে থাকতে শিখিয়েছে, অভাবকে সঙ্গী করেও।
এই বয়সেও তাই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সুর তুলতে হয় তাঁরই, যাঁর সুরে এক সময় নেচেছিল গোটা বাংলা। আজকাল সমাজ মাধ্যমে গান গেয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে কতজন। অথচ যে মানুষটা প্রান্তিক বাংলার মাটি থেকে সুর তুলে এনে সেই পথ তৈরি করেছিলেন, তাঁর জন্য নেই কোনও ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, নেই কোনও সহানুভূতির আলোর রেখা।
আরও পড়ুনঃ রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে পালাল রোহিত-ফুলকি! নেত্রগ্রামের শ্মশানে অপেক্ষা করছে চরম সত্য! ফুলকির বাবাকে খুঁজে পেল রোহিত! শ্মশানের অন্ধকারে মুখোমুখি রোহিত-বড় রাজা! ফুলকির বাবার আসল পরিচয় সামনে আসবে এবার?
বার্ধক্যকে সঙ্গে নিয়েই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন রতন কাহার। এ যেন এক বিস্মৃত শিল্পীর বেঁচে থাকার যন্ত্রণা। রতন হয়তো নিজেকে আর প্রতিষ্ঠিত করতে চান না, তিনি শুধু চান তাঁর গানের সম্মানটুকু বাঁচুক। আমরা কি পারি না, তাঁকে একটু শ্রদ্ধা জানাতে, একটু পাশে দাঁড়াতে? কারণ তিনিই তো আমাদের মাটির গান, আমাদের লোকসঙ্গীতের এক জীবন্ত ইতিহাস।