বাংলা সিনেমা দুনিয়ার অন্যতম অসাধারণ দম্পতি ছিলেন তরুণ মজুমদার ও সন্ধ্যা রায়। আজকালকার কথায় যাকে সত্যিকার অর্থে বলা হয়ে থাকে ‘পাওয়ার কাপল।’ কিন্তু না একসঙ্গে থাকা হয়ে ওঠেনি তাঁদের। ডিভোর্স না হলেও বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। তবে মানসিকভাবে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি তাঁরা। খোঁজখবর রাখতেন একে অপরের।
আসলে তরুণ মজুমদার ও সন্ধ্যা রায়ের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। প্রেম করে বিয়ে। কিন্তু নিঃসন্তান এই দম্পতির বৈবাহিক জীবনে বিভিন্ন জটিলতা চলে আসায় একসঙ্গে আজীবনের জন্য থাকা আর তাঁদের হয়ে ওঠেনি। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মানসিক বন্ধন অটুট ছিল। একইসঙ্গে বহু অভিনেতা অভিনেত্রীকে তাঁরা দু’জনে নিজেদের হাতে তৈরি করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো তাপস পাল, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, রাখী গুলজারের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তাঁরাই ছিলেন তাঁদের ছেলে- মেয়ে।
কেন ভেঙেছিল সন্ধ্যা রায় ও তরুণ মজুমদারের সাজানো সংসার? গুঞ্জন শোনা যায় নাকি পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। ওড়িয়া অভিনেত্রী মহাশ্বেতা রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসতেই সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যে ভাঙ্গন ঘটে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে টান থেকে গিয়েছিল।
আর তাই তো স্বামীর শারীরিক অবনতির খবর পেয়েই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে । কিন্তু না দেখতে দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত সংকটজনক ছিলেন তরুণ মজুমদার আর সেই জন্যই নাকি দেখতে দেওয়া হয়নি সন্ধ্যা রায়কে। যদিও স্বামীর জন্য তিনি প্রার্থনা থামাননি। প্রত্যেকটা মুহূর্তে ঠাকুর ঘরে একটাই প্রার্থনা করে গেছেন, মানুষটা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন।
যদি সমস্ত প্রার্থনাকে বিফলে দিয়ে ২০২২ সালের ৪ঠা জুলাই ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হন বর্ষীয়ান প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদার। সত্যজিৎ, মৃণাল পরবর্তী বাংলা সিনেমার কান্ডারী ছিলেন তিনি। কার্যত একার হাতে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন বাংলা সিনেমাকে। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয় এক অধ্যায়ের। কিন্তু এই মৃত্যু সংবাদ তরুণ মজুমদারের পরিবারের তরফে দেওয়া হয়নি সন্ধ্যা রায়কে। মিডিয়া তরফ থেকে জানানো হয়েছিল তাঁকে এই দুঃসংবাদ। তরুণ বাবুর মৃত্যু বিরাট ধাক্কা ছিল বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের জন্য। আজও স্বামী বিরহের ধাক্কা সামলে একাকীত্বকে আপন করে জীবন কাটাচ্ছেন বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।