বাংলা ইন্ডাস্ট্রির একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। যার নাম শুনলে ছোট থেকে বড় সবাই চিনবে কৌতুকসহ নানান ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে। তবে এত নাম করা একজন অভিনেতা কিন্তু সারাটা জীবন কাটিয়েছেন অক্লান্ত কষ্টে জীবন যাপন করে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে বেছে নিয়েছেন নিজের শখকে পেশা হিসাবে। এমন একজন জীবন যোদ্ধার আজকের জন্মদিন। তার জীবনের গল্পই আজ আপনাদের জানাবো।
১৯৪০ সালের ১৮ই অক্টোবর বাংলাদেশের বর্তমানে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র ৫ মাস বয়সে মাকে হারান তারপরে স্ত্রীর শোকে বিবাগী হয়ে যান তার বাবা। ছোট্ট পরানকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান আর কখনোই ফিরে আসেননি। সেই খবর পেয়েই পিসি ছুটে যান এবং নিজের কাছে নিয়ে আসেন তাকে। ছোট থেকে পিসিকেই মা বলে জেনেছেন তিনি।তারপর থেকে কলকাতার দমদমে বেড়ে ওঠা, সিটি কলেজ থেকে পাস করবার পরে সরকারি চাকরি পান পরান।
তবে চাকরির পাশাপাশি গণনাট্য আন্দোলনে ও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন তার স্ত্রী ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষিকা। কিন্তু তবু সংসারে দারিদ্রতা এবং অনটন লেগেই থাকতো সরকারি চাকরিজীবী হলেও গণনাট্য আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অভিনয় করতে হতো যার ফলে রোজকার অফিসে যাওয়া হয়ে উঠতো না তার আর সেই জন্য মাইনে থেকে টাকা ও কাটা যেত। যতই দারিদ্রতা দেখুক না কেন তার নিজের শখকে কখনোই ছেড়ে দেননি তিনি।
তারপরে ২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন এবং পুরোপুরি অভিনয়ে কে বেছে নেন পরবর্তী জীবনের জন্য। সারা বিশ্ব ঘুরলে তার মত অভিনেতা হয়তো অনেক কম পাওয়া যাবে, যার অভিনয় জীবন ঠিক মাত্রায় শুরু হয়েছিল ৬০ বছরের পরে। তবে অসম্ভব অভিনয় দক্ষতা থেকে অভিনয় জীবনে অসম্ভব খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। শোনা যায় একটি নাটকের তার অভিনয় দেখে অভিভূত হয়ে যান সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। ১৯৯৮ সালের ‘সত্যজিতের গপ্প’ ধারাবাহিকের ‘সাধন বাবুর সন্দেহ’ গল্পের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন তিনি। সেখান থেকে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু। তারপরে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’তে তার অভিনয় তাকে পরিচিতি এনে দেয়। তারপরে একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। আজ ৮২ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও তার অভিনয় দক্ষতা দর্শককে প্রভাবিত করে।