বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে মাধবী মুখোপাধ্যায় এক বিরাট নাম। বাংলা সিনেমায় তাঁর অবদান অপরিসীম। এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর পথ চলা শুরু হয় একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। নিজের মা লীলা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন জীবনে কোনদিন হেরে না যাওয়ার শিক্ষা। এরপর আর কোনদিন পিছনে ফিরে তাকাননি বইপাগল মাধবী মুখোপাধ্যায়।
একাধিক কিংবদন্তি পরিচালকের ক্যামেরাবন্দী হন তিনি। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা, কে নেই সেই তালিকায়! জানেন কী সিনেমা জগতে আসার আগে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আসল নাম ছিল মাধুরী। কিন্তু ১৯৬০ সালে অভিনেত্রী মৃণাল সেনের ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে যখন অভিনয় করছেন, সেই সময় প্রযোজক বিজয় চট্টোপাধ্যায় অভিনেত্রীর নাম বদলে রাখেন মাধবী।
বাংলার গর্ব সত্যজিৎ রায়ের একাধিক সিনেমায় অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী। সত্যজিতের ‘চারুলতা’, ‘কাপুরুষ’,‘মহানগর’-এর নায়িকা তিনি।এছাড়াও, ‘শঙ্খবেলা’, ‘গণদেবতা’,
‘ছদ্মবেশী’, ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘স্ত্রীর পত্র’, মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান তিনি।
তবে শুধু সিনেমা নয় মঞ্চাভিনয়েও ছিল মাধুরীর সমান দাপট। আজও টেলিভিশনের পর্দায় তরুণ অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে চলেছেন মাধবী মুখার্জি। একটা সময় বিয়ে করবেন না বলে স্থির করেছিলেন মাধবী মুখার্জি। কিন্তু পরে সুদর্শন অভিনেতা নির্মল কুমারকে বিয়ে করেন তিনি।
‘কমললতা’, ‘এক নদীর গল্প’, ‘যেখানে আশ্রয়’-সহ একগুচ্ছ ছবিতে অভিনয় করেছেন নির্মল কুমার চক্রবর্তী। বাঙালি মা বোনদের খুব কাছের অভিনেতা ছিলেন তিনি। কমললতা ছবিতে মুসলমান কবি গহর গোঁসাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নির্মল কুমার। অসম্ভব রকম জনপ্রিয় হয়েছিল এই চরিত্রটি। এই ছবিতে মহানায়ক উত্তম কুমারকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন নির্মল কুমার।
প্রসঙ্গত, অসম্ভব সুপুরুষ, অত্যন্ত ভদ্র, লাজুক মিষ্টি স্বভাবের এই মানুষটি একটি পার্টিতে মাধবী মুখার্জিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, স্বয়ং উত্তম কুমার বরকর্তআ হয়ে এসেছিলেন তাঁদের বিয়েতে। একটা সময় মাধবী মুখার্জি মাধবী চক্রবর্তী পদবী ব্যবহার করতেন। মাধবী মুখার্জিকে অভিনয় করতে দেখা গেলেও বহুদিন পর্দা থেকে দূরে নির্মল কুমার।
তাদের দুই মেয়ে মিমি এবং ঝুমি। দুজনেই নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত। একজন স্কুল শিক্ষিকা অন্যজন কলেজের অধ্যাপক। নিজেদের দুই মেয়ের বিয়ের পর দীর্ঘ ২৫ বছরের দাম্পত্য শেষে তাঁরা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
উল্লেখ্য, আসলে মতের অমিল হওয়ায় সসম্মানে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা দুজনে। কিন্তু ডিভোর্স হয়নি তাঁদের। আজও নির্মলের নামের সিঁদুর পরেন মাধবী। আজও প্রতি বৃহস্পতিবার সংসারের কল্যাণে পাঁচালি পড়ে লক্ষ্মী পুজো করেন মাধবী। আজও নির্মল কুমারের শারীরিক অসুস্থতায় ছুটে যান মাধবী। নির্মল কুমারের ৯২ তম জন্মদিনে মেয়েদের উদ্যোগে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন মাধবী- নির্মল। যদিও একাকীত্বকে সঙ্গী করে আজ আলাদা দুজনে।