জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’ (Jagaddhatri) গত সপ্তাহেই শেষ পর্বের মাধ্যমে বিদায় নিয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ধারাবাহিক টিআরপি তালিকায় একাধিকবার শীর্ষে থেকেছে, শেষ সপ্তাহেও শীর্ষ পাঁচে নিজের জায়গা করে নিয়েছিল। রহস্য আর পারিবারিক টানাপোড়েন মিলিয়ে গল্পটি শুধু একটি ক্রাইম থ্রিলারেই আটকে থাকেনি, বরং ধীরে ধীরে দর্শকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল। তাই শেষ দিনের শুটিং শুধু একটি কাজের সমাপ্তি ছিল না, ছিল বহু মানুষের আবেগের ইতি।
এই দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি কৌশিকী মুখার্জি। ‘রূপসা চক্রবর্তী’র (Rupsha Chakraborty) অভিনীত এই চরিত্রটি শুরু থেকেই আলাদা করে নজর কেড়েছিল। কখনও প্রশংসা, কখনও সমালোচনা, সবই সঙ্গী ছিল তাঁর। কেউ বলেছিলেন চরিত্রটি গল্পে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাচ্ছে, আবার অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন এই গুরুত্ব তিনি নিজের অভিনয় দিয়েই আদায় করে নিয়েছেন। বিতর্কের মাঝেও কৌশিকি যে দর্শকের মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে, সেটা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
শেষ দিনের শুটিংয়ে সেই আবেগই আর চেপে রাখতে পারেননি রূপসা। দীর্ঘদিন ধরে যিনি পর্দায় কৌশিকী মুখার্জি হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর কাছে চরিত্রটা আর অভিনয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটে দাঁড়িয়ে আবেগঘন হয়ে অভিনেত্রী বলেন, “কৌশিকীকে আমি কতটা দিতে পেরেছি জানি না, কিন্তু কৌশিকী মুখার্জি আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে। একজন নারী ঠিক কতটা আদর্শ হতে পারে, কৌশিকী মুখার্জি তাঁর উদাহরণ। আমি আসল জীবনে ওর ধরে কাছেও হয়তো নেই কিন্তু চরিত্রটা করতে করতে শিখেছি যে, কী কী করলে আমি ওর মতো আদর্শ হতে পারব।
শেষ পর্ব প্রযন্ত সবাই এতটা ভালোবাসা দিয়েছে এই চরিত্রটাকে, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, আমার খুব মনের কাছের এই চরিত্রটা। আমার অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, কখনও না কখনও কৌশিকী মুখার্জিকে নিয়েও আলোচনা হবেই। শেষ দৃশ্যের পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। চোখের জল বেরিয়েই গেল ভেবে যে, কাল থেকে আর কৌশিকী কোনও সংলাপ বলবে না। স্নেহাশিস আর গল্প লিখবে না জগদ্ধাত্রীর।” বলতে বলতেই আবার চোখ ভিজে এলো তাঁর! এই কথাগুলোই বুঝিয়ে দিল, কৌশিকী রূপসার জীবনে কতটা গভীর ছাপ ফেলেছিল।
আরও পড়ুনঃ “আমি যা ঠিক করে দেব, তাই খাবি!” প্রয়াত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর স্মৃতিচারণায় কিংবদন্তি মাধবী মুখোপাধ্যায়! কেন সহশিল্পী মাধবীকে এমন কড়া নিয়মে রাখতেন উত্তমপত্নী সুপ্রিয়া?
শুটিং ফ্লোরে দাঁড়িয়ে চোখের জল আটকাতে না পারা যেন সেই সম্পর্কেরই প্রকাশ। অভিনেত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন, একটা সময় নিজেকে রূপসা কম আর কৌশিকী বেশি মনে হতো তাঁর। এই চরিত্র তাঁকে শুধু পর্দায় পরিচিতি দেয়নি, ব্যক্তিগত ভাবনাতেও প্রভাব ফেলেছে। এদিকে ‘জগদ্ধাত্রী’ শেষ হলেও রূপসাকে ঘিরে আলোচনা থামেনি। ব্লুজ প্রযোজনা সংস্থার নতুন ধারাবাহিক ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’তে তিনি আইপিএস অফিসার কাজল ঘোষ। তবে ‘জগদ্ধাত্রী’ যে রূপসার অভিনয় জীবনে একটি আলাদা অধ্যায় হয়ে রয়ে গেল, তা শেষ দিনের আবেগেই প্রমাণ।
