গতকাল ছোটপর্দা এবং বড় পর্দার শিল্পীদের নিয়ে ‘ধন ধান্য’ প্রেক্ষাগৃহে হয়ে গেল টেলি অ্যাকাডেমি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোট ৪১ টি বিভাগের ১১ টি ধারাবাহিককে সম্মানিত করলেন। এদিন জি বাংলার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ (Chirodini Tumi Je Amar) ধারাবাহিক থেকে ‘প্রিয় মেয়ে’ বিভাগে একটি মাত্র পুরস্কার পেলেন মুখ্য অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায় (Ditipriya Roy)। তাঁর একা পুরস্কার জেতার পর থেকেই সমাজ মাধ্যমে যেন বিতর্কের আলাদা সুর শোনা যাচ্ছে! দর্শকদের এক বড় অংশের ক্ষোভ যে পর্দায় আর্য-অপর্ণার জনপ্রিয়তা যতটা আকাশছোঁয়া, পুরস্কারের তালিকায় সেটার প্রাপ্য সন্মান তাঁরা পেল না!
অনেক দর্শক অভিনেত্রীর তাক লাগানো অভিনয়ের প্রশংসা করলেও, একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলছেন ফলাফলের নিরিখে। কারণ, ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা নিয়ে যে উত্তেজনা প্রতিদিনই চোখে পড়ে আর পুরস্কারের রাতে তার ঠিক উল্টো ছবি সবাইকে ভাবিয়েছে। যাঁরা পর্দায় এই জুটিকে এত ভালোবাসেন, তাঁদের নাম সেরা তালিকায় না দেখে খানিকটা হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিক। দর্শকদের দাবি, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে যত কথাই হোক, পর্দায় এই দু’জনের রসায়নকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
এদিকে অসন্তোষের বড় অংশ আসছে এই অভিযোগ থেকে যে, অভিনেতাদের ব্যক্তিগত টানাপড়েন কি তবে পুরস্কার নির্বাচনে প্রভাব ফেলল? বহু দর্শক লিখছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চললেও সেটার ছাপ কখনও তারা কাজের উপর পড়তে দেননি। পর্দায় তারা বরাবরই নিজেদের চরিত্রে যথেষ্ট আন্তরিক আর সেই জায়গা থেকেই তাঁদের জুটি দর্শকের মনে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে। তাই শুধুমাত্র একটি পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানানোকে অনেকেই ‘অর্ধেক স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন।
সমাজ মাধ্যমে দর্শকরা আরও বলছেন, “ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, কাজের জায়গায় তারা বরাবরই সফল। তাই সেখানে বিচার হওয়ার কথা ছিল শুধু অভিনয় আর জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে। সেখানে বাস্তবের দ্বন্দ্বকে কেন টেনে আনা হবে?” কেউ লিখেছেন, “ধারাবাহিকটিকে একটি মাত্র পুরস্কার দেওয়া মানে যেন সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ব্যাপারটা! এই সিদ্ধান্তে বলতেই হয়, মন ভেঙেছে বহু বিশ্বস্ত দর্শকের।” আরও একটি বিষয় নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে, ‘সেরা জুটি’ যাদের হাতে উঠেছে, তাদের নিয়ে নাকি সমাজ মাধ্যমে তেমন কোনও আলোচনাই হয় না।
অনেকেই বলছেন, “যে জুটিকে নিয়ে মানুষ নিয়মিত আলোচনা করে, যাদের দৃশ্যমানতা সবসময়ই বেশি, তাদেরই তো পছন্দের তালিকায় থাকার কথা!” তাই পুরস্কারের ফল ঘোষণা হতেই বহু দর্শক প্রশ্ন তুলেছেন, ঠিক কি কারণে এবার বঞ্চিত হলো এই জুটি? তাদের মতে, জনপ্রিয়তার তুলনা করলে ফলাফলে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে, পুরস্কার মঞ্চে দিতিপ্রিয়ার স্বাভাবিক আচরণও আলাদা করে নজরে এসেছে। ঝড়ঝাপটার মধ্যেও তিনি কোনও মন্তব্য না করে কেবল নিজের পুরস্কারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর নীরবতা সত্ত্বেও বিতর্ক থামেনি।
আরও পড়ুনঃ নির্দিষ্ট সময়ের কলটাইম পেয়ে শুটিংয়ে ফিরলেন জীতু! ‘আগামী দিনগুলোতে আর কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হবে না’ আশায় অভিনেতা! কথা বললেন কি দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে?
সমাজ মাধ্যমে অনেকেই আবার লিখছেন, তিনি একা পুরস্কার পেলেও তাঁর সঙ্গে অভিনয় করা সহ-শিল্পীর অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। সেই জায়গা থেকেই অসন্তোষ যেন আরও বড় হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে, এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে দর্শকদের এই প্রতিক্রিয়া আবারও মনে করিয়ে দিল যে ছোটপর্দার জনপ্রিয়তা শুধু গল্পে বা অভিনয়ে নয়, দর্শকের আবেগেও তৈরি হয়। তাই একটা প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসছে, পর্দার এই সেরা জুটিকে কি সত্যিই তাদের প্রাপ্যটা পাবে না? নাকি পুরস্কারের মঞ্চে আবারও দেখা যাবে সিদ্ধান্তের গোলমাল?
