আজ বিনোদনের জন্য অজস্র সব মাধ্যম রয়েছে। টিভি, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ কত কী! কিন্তু একটা সময় বাঙালির বিনোদনের একমাত্র জায়গা ছিল যাত্রাপালা। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায়। আজও গ্রাম বাংলার দিকে যাত্রাপালার কদর থাকলেও আগের মতো আর নেই। বলা যায় বাংলার যাত্রার সুদিন হারিয়েছে। একেবারেই ধুঁকছে এই শিল্প।
উল্লেখ্য, বাংলার যাত্রাপালার লক্ষ্মী কাকে বলা হত জানেন? তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য কত রাত জেগে থাকত গ্রামবাসী। তিনি আসবেন এই উত্তেজনায় ঘুম হতো না কত মানুষের। তিনি যাত্রালক্ষ্মী বীণা দাশগুপ্ত।
গ্রাম-বাংলার সর্বত্র যেখানেই বীণা দাশগুপ্ত অভিনয় করতে গেছেন তাঁকে ঘিরে সাধারণ দর্শকদের উচ্ছ্বাস বাঁধ ভেঙেছে। তবে শুধুমাত্র অভিনয় দক্ষতা নয় অসামান্য ছিল তাঁর গানের গলা। অসম্ভব সুরেলা, হৃদয় স্পর্শী সেই গলা। ‘যাত্রালক্ষ্মী’কে ঘিরে মানুষের অমোঘ আকর্ষণ ছিল। আর তাই যাত্রালক্ষ্মী নিজেও বলেছেন, ‘অভিনয়ই আমার জীবনের সব, আর তাই দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমার চেষ্টা সর্বক্ষণ একইরকম থাকে।
১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরে জন্ম হয় বীণা দাশগুপ্তর। বীণা দেবীর বাবা রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য পালা গান লিখতেন গাইতেন অভিনয় করতেন। অভাবের সংসার ছিল। আর এই অভাবের সংসারে মেয়েকে সেই অর্থে পড়াশোনা শেখাতে পারেনি বাবা রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। কিন্তু মেয়ের অসামান্য গানের গলা আর অভিনয়ের প্রতি টান দেখেছিলেন তিনি। বীণা দেবীর যখন আঠারো বছর বয়স তখন দিন প্রথমবারের মতো যাত্রা অভিনয় করেন। তাঁর গানের গলা আর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয় দর্শকরা।
পরবর্তীতে কলকাতায় আসেন বীণা দেবী। নিজের গুরুদেব হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বাংলা যাত্রা জগতের উজ্জ্বল নাম অরুণ দাশগুপ্তকে। পরে গুরুকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী মিলে দীর্ঘ কয়েক বছর বিভিন্ন যাত্রা দলে অভিনয় করেছেন। তাঁদের সফল সব যাত্রাগুলি হল ‘নটী বিনোদিনী’, ‘অচল পয়সা’, ‘মীরার বঁধুয়া’, ‘মা-মাটি-মানুষ’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘হরেকৃষ্ণ হরেরাম’ সহ বহু । এছাড়াও একটি ধারাবাহিক ও কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন বীণা দাশগুপ্ত।
যাত্রালক্ষ্মী বীণা দাশগুপ্তর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল বাংলা যাত্রাপালাকে। বলা যায় যাত্রা শিল্পকে অনাথ করে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৫ সালের ৮ই এপ্রিল বর্তমান থেকে যাত্রা শেষ করে ফেরার পথে একটি মাল বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বীণা দেবীর গাড়ির। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় যাত্রালক্ষ্মীর। ভেঙেছিল বুকের পাঁজর, ছিন্ন ছিন্ন হয়েছিল শরীর বলে জানা যায় অভিনেত্রীর।