তিনি ভারতীয় সিনেমার (Indian Cinema) তারকা অভিনেতা। টলিউড-বলিউড জুড়ে তাঁর খ্যাতি। সর্বত্র তার দৃপ্ত পদচারণা। তার অভিনয় দেখলে চোখের শান্তি। তিনি বাঙালির গর্ব তিনি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) । তবে নায়ক হিসেবে নয়, তিনি জনপ্রিয় হতে চেয়েছিলেন খলনায়ক হিসেবে। তবে এই অভিনেতার ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার এক জনপ্রিয় খ্যাতনামা পরিচালক (Director) ।
ছোটবেলায় কিন্তু পড়াশোনাতে বেশ ভালোই ছিলেন আজকের মহাগুরু। অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জিলা স্কুলে নিজের শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে রসায়নে স্নাতকের ডিগ্রী লাভ করেন। তবে এরপরই মোড় ঘুরে যায় তার জীবনের।
রসায়নে স্নাতক করার পর তিনি ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইণ্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে স্নাতক করেন। সেইদিনের গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন খ্যাতনামা বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেন। ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় মিঠুন চক্রবর্তীর অভিষেক হয় হিন্দি চলচ্চিত্র মৃগয়ায়। এই ছবিতে তিনি মমতা শঙ্করের সঙ্গে অভিনয় করেন। আর এই ছবির হাত ধরেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান মিঠুন চক্রবর্তী।
নিজের এই প্রথম ছবির মধ্যে দিয়েই তিনি ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে ভারতীয় ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ লাভ করেন। তবে এই ছবির পিছনেও রয়েছে গল্প। মৃণাল সেন মিঠুন চক্রবর্তীকে পেছন থেকে দেখেছিলেন। পছন্দ হওয়ায় ছবি পাঠাতে বলেছিলেন। অন্যদিকে মিঠুন চক্রবর্তী আবার ভিলেন হওয়ার লোভে গোঁফ লাগিয়ে পরিচালককে ছবি পাঠিয়েছিলেন। আর যা দেখে ছবি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন মৃণাল সেন। বলেছিলেন মৃগয়া করব, নায়ক খুঁজছি। খলনায়ক নয়।
মিঠুন চক্রবর্তীর কথায় অন্ধকার গলির একটি ছেলেকে নায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই দিনই বদলে গিয়েছিল তার জীবন। গায়ের রং দেখে বাতিল করে দেওয়া নয় বরং মিঠুনের অভিনয় প্রতিভাকে চিনে নিয়েছিলেন মৃণাল। না এমনটা একেবারেই নয় যে তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বরং বলিউডে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। করতে হয়েছিল বিরাট স্ট্রাগল। কিন্তু দমে যাননি তিনি। লড়াই করে গিয়েছিলেন সমান তালে। আর সেই কারণেই মিলেছিল সাফল্য। নিজের চেষ্টাতেই যশ-খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
বলিউডে মিঠুন চক্রবর্তী জনপ্রিয় হন তাঁর ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির জন্য। বলাই বাহুল্য এই ছবির মধ্যে দিয়ে বলিউডের গন্ডি পেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। সিনেমার পর্দায় অভিষেকের পর তিনি দো আনজানে এবং ফুল খিলে হ্যায় গুলশান গুলশান ছবি দু’টোয় সহ-চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে এই সিনেমাগুলো তেমন চলে নি। তবে ‘নদী থেকে সাগর’ যেখানেই তিনি পা রেখেছেন ‘কিসমত কি বাজি’ মেরেছেন।
অভিনেতার ‘আঙ্গার’, ‘লোহা’ একাধিক সিনেমাও জনপ্রিয় হয়েছে। তারপর একে একে মুক্তি পায় তাঁর ‘ঘর এক মন্দির’, ‘ওয়াতন কে রাখওয়ালে’, ‘দিলওয়ালা’র মতো একাধিক নামী সিনেমা। টলিউডেও সমান দীপ্ত ছড়িয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ৩০০ টিরও অধিক হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও, বাংলা, পাঞ্জাবী, তেলেগু, ওড়িয়া, ভোজপুরী চলচ্চিত্রেও অংশ নিয়েছেন। তিনি ভারতীয় সিনেমার উজ্জ্বল নক্ষত্র মিঠুন চক্রবর্তী।