ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে নাকি লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে নেই। এই প্রবাদকেই ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছেন ভিকি রায়। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছেন, সেসময় তেমন কোন স্বপ্ন ছিল না। স্টেশনে বোতল কুড়িয়েছেন, প্যন্ট্রি কারের খাবার খেয়েছেন, ১১ বছরের বাচ্চাটা ২ টাকার কম্বল ভাড়া করে রাত্রে শুতেন। আজ সেই মানুষটাই আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার। জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের শিকড় ভুলে যাননি তিনি। তাদের নিয়েই কাজ করছেন।
১১ বছর বাচ্চা একটা ছেলে কি ভেবে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে ভিকি জানান, “আমি যখন তিন-চার বছরের ছিলাম আমার মা বাবা আমাকে নানা নানীর ঘরে রেখে দিয়েছিল। আমি ছোট থেকে দেখতাম শহর গেলে হিরো হয়ে যায়। আমি ভাবতাম যে মা-বাবা গরীব তো শহর চলে গেলে আমি বড়লোক হয়ে যাব। একদিন মামার পকেট থেকে কিছু টাকা চুরি করে স্টেশনে চলে গেলাম। দিল্লির ট্রেন দাঁড়িয়েছিল, উঠে পড়লাম আর দিল্লি পৌঁছে গেলাম।”
আন্তর্জাতিক মানের এই ফটোগ্রাফার তার সেই দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে বলেন, “স্টেশনে কিছুজন আমার কথা শুনল। ওদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে দু-তিন দিনের মাথায় আমি কাজ করা শুরু করলাম। যে জলের বোতলগুলো সবাই ফেলে দিত সেই বোতলগুলো কোড়াতে শুরু করলাম। স্টেশনে থাকা খুব কঠিন হয়ে গেছিল। কোন যাত্রী কোন জিনিস চুরি হলে ভাবত আমরা নিয়েছি। তাই আমি ভেবেছিলাম স্টেশনে থাকবো না। তারপর একটা ধাবায় বাসন মাজার কাজ করেছি। ধাবাতেই একজনের সাথে দেখা হয়, সে আমাকে এনজিওতে পাঠায়, সেখানেই বাকি পড়াশোনা শেষ করি।” ।
পড়াশোনায় ভালো নম্বর পেতে পারেনি, কিন্তু ফটোগ্রাফির ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছের কাঁধে ভর করেই আজ তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন। ভিকি রায়ের কথায়, “এনজিওর থেকেই কোডাকের ক্যামেরা কিনে দেওয়া হয়েছিল। ১৮ বছর হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আর থাকা যায় না। তারাই একটা ফটোগ্রাফারের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমাকে কাজ খুঁজে দিল। অ্যাসিস্ট করে করে কাজ শিখেছিলাম ২০০৭ এ আমার প্রথম এক্সিবিশন হয়েছিল।এক্সিবিশনে দেখিয়েছিলাম রাস্তায় আমার জীবন কেমন ছিল।”
এখন ভিকিকে বহু জায়গায় ডাকা হয়, নিজের জীবন কাহিনী শুনিয়ে সকলকে মোটিভেশন দেওয়ার জন্য। তিনি বেশিরভাগই এনজিওর হয়ে কাজ করেন। ২০০৮ সালে একটা ফটোগ্রাফি কম্পিটিশন হয়েছিল, সেখানে চারজনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ভিকি একজন। ছবি তোলার সৌজন্যেই দেশ-বিদেশে ঘুরেছেন। পরিচয় হয়েছে বহু মানুষের সঙ্গে। চাকরির বাধা জীবন ভিকির পছন্দ নয়। জীবনের চড়াই উৎরাই তার পছন্দের।