বাংলা টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘ইন্দ্রাণী হালদার’ (Indrani Haldar) । দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি বহু দর্শকপ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তবে তার কর্মজীবনের অন্যতম মাইলফলক ছিল স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’ (Sreemoyee) । এই সিরিয়ালে তিনি শ্রীময়ী চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন।সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠা করার ইন্দ্রাণীর অনবদ্য অভিনয় শ্রীময়ী চরিত্রকে বাস্তবসম্মত ও হৃদয়স্পর্শী করে তুলেছিল। এই চরিত্রের মাধ্যমে অনেক মধ্যবয়সী নারী নিজেদের প্রতিফলিত দেখতে পেয়েছিলেন, যা এই ধারাবাহিককে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল।
শ্রীময়ী চরিত্রটি ছিল একজন সাধারণ গৃহবধূর জীবনসংগ্রামের প্রতিচিত্র। স্বামীর প্রতারণা, সন্তানদের অবহেলা, পারিবারিক অবমূল্যায়ন—সবকিছুর মধ্যেও শ্রীময়ী নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। জীবনের বিভিন্ন ওঠাপড়ার মধ্যেও তিনি ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেন যে একজন নারী শুধু মা, স্ত্রী বা গৃহবধূই নন, বরং তিনি নিজে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি। এই চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত নারীর ধারণার বিপরীতে এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী হালদার।

সম্প্রতি, একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে যেটি হল ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের’ ‘অপুর সংসার টক শোয়ে’র। এখানে ইন্দ্রাণী হালদার তার ব্যক্তিগত জীবনের একটি দুঃখের কথা শেয়ার করেছেন। তিনি জানান, কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি কখনো মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারেননি। তার মতে, কাজের প্রতি তার অগাধ নিষ্ঠা ও একাগ্রতা জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, “কাজের পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যেন জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হাতছাড়া হয়ে গেছে, বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারিনি স্বামী ভাস্করকে”।
আরও পড়ুনঃ রূপ, প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ব চরিত্রেই রয়ে গেলেন রূপসা! নায়িকার গুন নিয়েই সাইড রোলে! তাকে মূল নায়িকা চরিত্রে দেখতে চান?
তিনি বলেন এই সিদ্ধান্ত তার এবং তার স্বামী ভাস্কর ঘোষের জন্য এক বড় আফসোস হয়ে থেকে গেছে। তবে, এই শূন্যতাকে ইন্দ্রাণী অন্যভাবে পূরণ করার চেষ্টা করেন। তার মতে, দর্শকদের ভালোবাসা, তার চারপাশের তরুণ সহ-অভিনেতারা, এবং তার শিল্পীসত্তার প্রতি দায়বদ্ধতাই তাকে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, “আমি অনেক নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি, যারা আমাকে মা কিংবা মেন্টর হিসেবে দেখে। তাদের সাফল্য আমার কাছে যেন নিজের সন্তানের সাফল্যের মতোই।” অভিনয় জগতেই তিনি নিজের পরিবার খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে করেন।
ইন্দ্রাণী হালদারের এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে, কর্মজীবনে সফল অথচ ব্যক্তিগত জীবনে কিছু না-পাওয়ার আক্ষেপ থাকা নারীদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা বেশ ভালোভাবে সম্পর্কিত। তার বক্তব্য সমাজের অনেক নারীর বাস্তবতাকে সামনে তুলে ধরেছে, যারা কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকার কারণে ব্যক্তিগত কিছু স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেছেন। ইন্দ্রাণীর মতো অনেক নারীই হয়তো কাজের দিক দিয়ে সাফল্য পান, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কিছু না পাওয়ার এক ধরনের খালি অনুভূতি থেকেই যায়।