টলিউড অভিনেতা ‘অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের’ (Abhishek Chatterjee) প্রয়াণের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও, তাঁর স্মৃতি আজও অমলিন। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে অভিষেক আজও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু পরিবারের কাছে তিনি শুধুই স্বামী, বাবা, এক ভালোবাসার মানুষ। তাঁর চলে যাওয়ার পর স্ত্রী ‘সংযুক্তা’ ও কন্যা ‘সাইনা’ (Saina Chatterjee) নিজেদের মতো করে জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে অভিষেক যে এখনো তাঁদের সঙ্গেই আছেন—এই বিশ্বাসে পথ চলছেন সংযুক্তা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর জীবনের নানা অধ্যায়ের কথা ভাগ করে নেন সংযুক্তা, যেখানে উঠে আসে তাঁদের প্রেম, জীবনসংগ্রাম ও এক অনির্বচনীয় যোগসূত্রের কথা।
সংযুক্তা জানান, তাঁদের সম্পর্কটা যেন ভাগ্যের লিখন ছিল। তিনি তখন মুম্বাইতে, পেশায় একজন ব্যাংকার। হঠাৎই একদিন অনলাইন মাধ্যমে অভিষেকের সঙ্গে পরিচয়। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং সেখান থেকে বিয়ে—সবটাই যেন ছিল এক স্বপ্নের মতো। তাঁদের প্রথম দেখা ও কথোপকথনেই এক বিশেষ মিল লক্ষ্য করেছিলেন তাঁরা—দুজনেই প্রবলভাবে আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। সংযুক্তার মতে, অভিষেক ছিলেন একেবারেই ঠাকুরভক্ত, আর তাঁর নিজের জীবনও বরাবরই ঠাকুরের প্রতি গভীর বিশ্বাসে গাঁথা। এই মানসিক সাযুজ্যই তাঁদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছিল।

তবে দাম্পত্য শুধু সুখের মুহূর্তের গল্প নয়, অভিষেকের জীবনে কঠিন সময়ও কম ছিল না। সংযুক্তা বলেন, একসময় অভিষেককে পরপর ২১টি সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বারবার এই প্রত্যাখ্যান তাঁকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। তবুও তিনি হার মানেননি। ছোট পর্দায় নিজের জায়গা করে নিতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেই সাফল্যের মাঝেই অসুস্থতা গ্রাস করে তাঁকে। ২০২১ সালে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পর থেকেই শারীরিক জটিলতা বাড়তে থাকে, যা একসময় চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি শুটিং ফ্লোরেই লড়ে গেছেন, শিল্পীর মতো তাঁর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিজের কাজে নিবেদিত ছিলেন।
সংযুক্তার বিশ্বাস, অভিষেক আজও তাঁদের সঙ্গে আছেন, যদিও শারীরিকভাবে উপস্থিত নন। এমনকি কিছু অলৌকিক ঘটনার কথাও তিনি শেয়ার করেছেন, যেখানে অভিষেকের উপস্থিতি অনুভব করেছেন। তিনি বলেন অভিষেক তাঁকে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখান। তিনি আরো বলেন, “একদিন বাড়ির প্রিন্টারের কাগজ শেষ হয়ে গিয়েছিল, অথচ ব্যস্ততার কারণে সেটি কেনা হয়নি। ঠিক তখনই অভিষেকের পুরনো কাগজ বিক্রেতা ফোন করে জানতে চান, নতুন কাগজ লাগবে কিনা! এমন ঘটনা কি কাকতালীয় হতে পারে?” এই ধরনের ছোটখাটো ঘটনাই তাঁকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিয়েছে, অভিষেক কোথাও না কোথাও এখনো তাঁদের পথ দেখাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ চুপ করে বসে থেকে আগে গানের অর্থ বুঝে ছিল, তারপর চোখ দিয়ে নামে অশ্রু ধারা! জাত শিল্পী শ্রেয়া, আবেগে ভাসলেন শ্রীজাত
অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা সাইনা এখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছেন। স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও তাঁর চিন্তাধারা অনেক পরিণত। বাবার মতোই তিনি অভিনয়ের প্রতি অনুরাগী এবং ভবিষ্যতে অভিনেত্রী বা মডেল হতে চান। বাবার কাছ থেকে তিনি অভিনয়ের টুকিটাকি শিখেছেন—কীভাবে এক টেকে পারফেক্ট শট দিতে হয়, কীভাবে সংলাপ বলতে হয়, কীভাবে চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করতে হয়। বাবার এই শিক্ষা ও স্মৃতি তাঁকে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে বিশ্বাস করেন সংযুক্তা। অভিষেক আজ নেই, কিন্তু তাঁর প্রভাব, ভালোবাসা ও শিক্ষা তাঁদের পরিবারের প্রতিটি মুহূর্তে অমর হয়ে আছে।