টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashree Ganguly)। বাংলা সিনেমায় তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্ল্যামার ও স্টারডমের ঝলকানি নিয়ে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রমাণ করেছেন যে শুধুমাত্র সৌন্দর্য্য নয়, অভিনয় দক্ষতাও তাঁকে টলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের তালিকায় নিয়ে এসেছে। ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ (Paran Jai Jaliya Re) ও ‘চ্যালেঞ্জ’ (Challenge)-এর মতো ব্লকবাস্টার ছবি দিয়ে শুরু হলেও, আজকের শুভশ্রী শুধু বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা নন, বরং তিনি বিভিন্ন চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখেন।
টলিউডে দীর্ঘদিন ধরে নিজের জায়গা ধরে রাখা সহজ নয়, কিন্তু শুভশ্রী তা সফলভাবে করে দেখিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অভিনয় আরও পরিণত হয়েছে, যা ‘পরিণীতা’ (Parineeta) থেকে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ (Indubala Bhater Hotel)-এ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। শুধু বড় পর্দাই নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। বর্তমানে টলিউডে তিনি ব্যস্ততম নায়িকাদের মধ্যে একজন, যার কেরিয়ারে একের পর এক নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, আর তিনি সেগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন।

তবে একটা সময় ছিল, যখন তিনি হঠাৎ করেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিরতি নেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারের ভিডিও নতুন করে ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে তিনি জানান, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ করার পর টানা চার বছর তিনি কোনো কাজ করেননি। এটি সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল, কাউকে জোর করে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “যেটার জন্য এই বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটাই যখন আর নেই, তখন জীবন নতুন করে ভাবতে হবে।” সেই সময় তিনি মানসিকভাবে কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু নিজের পরিবারকে সবসময় খুশি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এমনও হয়েছে, তিনি পাঁচ মিনিট অন্তর বাথরুমে গিয়ে কেঁদে এসেছেন, কিন্তু বাইরের দুনিয়ার কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেননি। তবে তিনি নিজেকে কখনও নিরাপত্তাহীন মনে করেননি। শুভশ্রীর বক্তব্য ছিল, “আমার হারানোর কিছু নেই, কারণ তখন আমার হাতে কিছুই ছিল না। তাই যা কিছু আসবে, সেটাই পাওনা।” অভিনেত্রীকে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন কি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি একজন সফল মা হতে চাই।”
আরও পড়ুনঃ টিআরপিতে শীর্ষে থাকলেও ‘রায়ান’ নয়, জি-বাংলার সেরা নায়কের শিরোপা ‘রুবেল দাসে’র! মঞ্চে আবেগঘন মুহূর্ত ক্যাপচার করলেন স্ত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য!
ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে তিনি ফিরে আসেন। তাঁর জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়, যখন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর (Raj Chakraborty) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সঙ্গে তাঁর কেরিয়ারেও আসে নতুন মোড়। একের পর এক সফল ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেন, তিনি শুধু স্টার নন, একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীও। বর্তমানে শুভশ্রী নিজের কেরিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন দুটোই দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন। দুই সন্তানের মা হওয়ার পরও তিনি ব্যাক টু ব্যাক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন।
‘পরিণীতা’, ‘ধর্মযুদ্ধ’, ‘হাবজিগাবজি’, ‘বাবলি’ এবং ‘সন্তান’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর জন্য তিনি বিশেষ পুরস্কার জিতেছেন। আগামী দিনে তাঁর হাতে রয়েছে একাধিক বড় প্রজেক্ট— অদিতি রায়ের ওয়েব সিরিজ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহো গৌরাঙ্গের নাম রে’ এবং নির্ঝর মিত্রর নতুন ছবি। অনুরাগীরা বিশ্বাস করেন, এই কাজগুলো শুভশ্রীকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং বাংলা সিনেমার অন্যতম উজ্জ্বল তারকা হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করবে।