জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত! অবমাননা হয়েছে ইসলামের, জি বাংলার বিরুদ্ধে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের

বর্তমানে বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দুদের পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক, কার্যত নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাওয়ার পথে হিন্দুরা (Hindu religion) সেখানে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়ে গেছে, যা দেশের ভিতরে এবং বাইরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। আগের বছর হাসিনা সরকারের পতনের পর একচেটিয়া হিন্দুদের উপর আক্রমণ আনা হয় সেখানে। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং রাজনৈতিক চাপের মধ্যে, অনেক হিন্দু পরিবারের আজ প্রায় শেষের পথে।

এই সময়ে, টেলিভিশন এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষত ধর্মীয় সংবেদনশীলতা নিয়ে আলোচনা করতে। তবে, যখন কোনো ধারাবাহিক বা অনুষ্ঠান এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তখন তা অনেক সময় বিতর্কের সৃষ্টি করে। সম্প্রতি, সমাজ মাধ্যমে একটি বিতর্কিত দাবি ছড়িয়ে পড়েছে—জি বাংলা নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে এমন একটি ধারাবাহিক সম্প্রচার করছে।

আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ‘ইশক সুবহান আল্লাহ’ (Ishq Subhan Allah) — এটি জি টিভির (Zee TV) একটি পুরনো হিন্দি ধারাবাহিক। জি বাংলা কেবল ওই পুরনো ধারাবাহিকের বাংলা ডাব সংস্করণই সম্প্রচার করতে চলেছে, দুপুর, ৩:৩০ টায়। ধারাবাহিকটি মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, নারীর স্বাধীনতা, তিন তালাক, হিজাব, মেয়েদের অধিকার—এইসব সংবেদনশীল বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে এটি বিতর্ক তৈরি করার জন্য নয়, বরং এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করার উদ্দেশ্যে।

বাংলা টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ সংকট, নারীর স্বাধীনতা, বা তিন তালাকের মতো প্রসঙ্গ প্রায় অনুপস্থিত ছিল। এই ধারাবাহিকটি সেই অনুপস্থিত আলোচনাকেই সমাজের সামনে আনছে, সামাজিক বার্তার মোড়কে। তবে, যা নিয়ে বিতর্ক তা ২০১৮ সালের ঘটনা। সে বছর, উত্তরপ্রদেশের একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী জি টিভির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল। অভিযোগ ছিল, ধারাবাহিকটি মুসলিম ধর্মবিশ্বাসের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।

কিন্তু আদালত ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং ধারাবাহিকটি স্বাভাবিকভাবে সম্প্রচারিত হয়েছে জি টিভিতে। জি বাংলা এখন সেই ধারাবাহিকটির বাংলা ডাব সংস্করণ সম্প্রচার করছে, সম্পূর্ণ আইনি ও ধর্মীয়ভাবে বৈধভাবে। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল, মিথ্যে প্রচারে। বর্তমানে ভারতের কোনো আদালতে জি বাংলার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, এবং কোনো স্থগিতাদেশও জারি হয়নি।

যদিও কিছু ফেসবুক পেজ এবং সংবাদমাধ্যম দাবি করছে যে “জি বাংলার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে” এবং “ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত” হয়েছে, তারা আসলে ২০১৮ সালের ঘটনার সাথে বর্তমান ডাব সংস্করণের ঘটনা গুলিয়ে ফেলছে। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা। ‘ইশক সুবহান আল্লাহ’-র মূল বক্তব্য হল—এক শিক্ষিত মুসলিম মেয়ের আত্মসংঘাত ও প্রতিবাদ, তিন তালাকের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান, হিজাবের ব্যাখ্যা, এবং নারীর অধিকারের প্রশ্ন তোলা।

এই গল্পটি সামাজিক বার্তা বহন করেছে, ধর্মকে অবমাননা না করেই, এমনটা নির্মাতাদের দাবি। বরং এটি ধর্মের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলা ধারাবাহিকে এই প্রথম মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং ট্যাবু নিয়ে একটি সিরিয়াস আলোচনা শুরু হয়েছে। যদি কেউ এই আলোচনা নিয়ে ভয় পায়, সেটা শিল্পের দোষ নয়—এটা সমাজের অন্তর্নিহিত গোঁড়ামির প্রতিফলন। তাই তথ্য যাচাই করুন, গুজবে কান দেবেন না।

Piya Chanda