অনেকদিন পর সাহিত্যনির্ভর গল্পকে বড় পর্দায় ফিরিয়ে আনছেন পরিচালক কাকলি ঘোষ এবং অভিনব মুখোপাধ্যায়। তাঁদের নতুন ছবি ‘ভূতপূর্ব’ (Bhootpurba) একেবারেই সাধারণ ভৌতিক ছবি নয়। বরং এটি এক ধরনের সাহিত্যভিত্তিক সংস্করণ, যেখানে তিনটি বিখ্যাত গল্প—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মণিহারা’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ (Taranath Tantrik) এবং মনোজ সেনের ‘শিকার’কে একত্রে জুড়ে তৈরি হয়েছে নতুন একটি আঙ্গিকে। বাংলার সাহিত্যের রত্নভাণ্ডারকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার এই প্রয়াসে যেমন রয়েছে সাহিত্যপ্রেমের ছাপ, তেমনি আছে অতিপ্রাকৃতের রোমাঞ্চও।
এই ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘মাতু পাগলি’, এক জটিল এবং গভীর চরিত্র। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন টেলিভিশনের চেনা মুখ ‘রূপাঞ্জনা মিত্র’ (Rupanjana Mitra) । বহুদিন পর বড় পর্দায় ফিরেই এমন একটি সাহিত্যধর্মী ও গভীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী। রূপাঞ্জনার মতে, বাংলা চলচ্চিত্রে সাহিত্যনির্ভর উপস্থাপনা বরাবরই সমৃদ্ধ। সত্যজিৎ রায় থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ, সাহিত্যের প্রতি তাঁদের অনুরাগ ছবির দৃশ্যতেও প্রতিফলিত হয়েছে। সেই ধারাকে সন্মান জানিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘ভূতপূর্ব’।
রূপাঞ্জনা তাঁর চরিত্র মাতু সম্পর্কে বলেন, “মাতু কোনও সাধারণ পাগলি নয়। ওর মধ্যে এক যন্ত্রণার ইতিহাস আছে। এক জন্মে সে তার আরাধ্য দেবীকে পায়নি, সেই অতৃপ্তি থেকেই মাতুর পুনর্জন্ম। এমন চরিত্রে অভিনয় আমার কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।” বীরভূমের অজয় নদীর তীরে রাতের অন্ধকারে শুটিং করার কথাও জানালেন তিনি। সেখানে আজও শবদাহ হয়। এমন এক অলৌকিক পরিবেশে শুটিং করে রূপাঞ্জনার মনে হয়েছে যেন বাস্তব আর গল্প মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
এই ছবিতে তারানাথের জীবনে মাতুর প্রবেশ যেন সাধনার পথের এক মোড়ে দুই বিপরীতধর্মী মানুষের মিলন। যেখানে মাতু একদিকে শক্তির আধার, অন্যদিকে তারানাথ ভোগ ও ত্যাগের টানাপোড়েনের দ্বন্দ্বে। সেই মানসিক দ্বন্দ্ব, সেই রহস্যময়তা রূপাঞ্জনার অভিনয় এক অন্য মাত্রা দিয়েছে বলে মনে করছেন ইউনিটের সদস্যরাও। অভিনেত্রীর মতে, “মাতুকে বুঝতে আমার সময় লেগেছে, কিন্তু চরিত্রটার গভীরতায় ডুব দিয়ে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেছি।”
আরও পড়ুনঃ বড় রাজাকে খুঁজতে গিয়ে চরম বিপদ! চোরা বালিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফুলকি-রোহিত! রুদ্রের ছক সফল, না কি আরও বড় চমক অপেক্ষায়? কে সেই রহস্যময় ব্যক্তি, যিনি প্রাণ বাঁচালেন ফুলকি-রোহিতের?
‘ভূতপূর্ব’-এর গল্প একেবারেই আলাদা ধাঁচের। ষাটের দশকের শেষভাগের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি এক অর্থে বাংলার সাহিত্যের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য। আড্ডায় গল্পের মতো করে গল্প বলার মধ্যে যেমন রয়ে গেছে অলৌকিক আবহ, তেমনি থমথমে এক বাস্তবতাও। আর এই গল্পগুলিকে যারা পর্দায় জীবন্ত করে তুলছেন, তাঁদের মধ্যে রূপাঞ্জনার উপস্থিতি ছবিকে এক অনন্য মাত্রা দিতে চলেছে, তা বলাই যায়। সাহিত্যপ্রেমী দর্শকদের কাছে এই ছবি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে বলেই আশা করা যায়।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।