বাংলা বিনোদন জগতে ইন্দ্রানী হালদার (Indrani Halder) এক এমন নাম, যাঁর প্রতিভা নিয়ে কখনও কোনও প্রশ্ন তোলা যায় না। ৯০-এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিক ও সিনেমায় তাঁর দাপট অনস্বীকার্য। বহু মানুষের কাছেই তিনি একজন আদর্শ অভিনেত্রী। কিন্তু রঙিন পর্দার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক মনখারাপের গল্প, এক শূন্যতা, যেটা হয়তো ক্যামেরা বুঝে উঠতে পারে না।
১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি, কলকাতায় জন্ম ইন্দ্রানীর। বাবা সঞ্জয় হালদার টলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সাংস্কৃতিক আবহেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। ছোট থেকেই নাচ ও অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন। শিখেছেন থাঙ্কমনি কুট্টির কাছে নাচ। কিন্তু পড়াশোনার দিকটা আগেই সেরে নিতে বলেছিলেন তাঁর মা। অবশেষে ১৯৮৬ সালে দূরদর্শনের ‘১৩ পার্বণ’ ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু। আর ১৯৯০ সালে ‘মন্দিরা’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। প্রথম ছবিতেই প্রসেনজিতের বিপরীতে অভিনয় করে নজর কেড়ে নেন।
‘দান প্রতিদান’, ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ‘আপন হলো’, ‘চৌধুরী পরিবার’ সহ বহু হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবু ব্যক্তিগত জীবনে সেই উষ্ণতা পাননি। প্রথমে অভিনেতা সঞ্জীব দাসগুপ্তের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন বহু বছর, কিন্তু সেই সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। পরে প্রযোজক অমরেন্দ্র ঘোষকে বিয়ে করেন ১৯৯৩ সালে, কিন্তু সেই সম্পর্কও টিকল না দীর্ঘদিন। বিচ্ছেদের পর ১৯৯৮ সালে বিমানচালক ভাস্কর রায়কে বিয়ে করেন। সেই সংসার কিছুটা স্থির হলেও, মা হয়ে ওঠার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়।
ইন্দ্রানী নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জীবনের একপর্যায়ে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন তাঁর বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছে গিয়েছিল। আর তাই চেষ্টাটাও বেশি দূর এগোয়নি। এমনকি দত্তক নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু স্বামী রাজি হননি। ফলে মা হওয়ার ইচ্ছেটাও বিসর্জন দিতে হয়। অভিনয়কেই নিজের সন্তানের মতো ভালোবেসেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ “আজকে ‘জিৎ’ যেখানে আছে, তার পেছনে কৃতিত্বটা কোয়েলের”, “কোয়েল না থাকলে ‘জিৎ’ কোনোদিনই সুপারস্টার হতে পারতো না!”— সাফল্যের মঞ্চে কোয়েলের ভূমিকা স্বীকার করলেন জিৎ! কোয়েল না থাকলে নাম হতো না, মেনে নিয়ে কি বললেন অভিনেতা?
ইন্দ্রানী হালদার আজও হাসিমুখে সকলের সামনে থাকেন। কিন্তু সেই হাসির আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে বহু আক্ষেপ, অপূর্ণতা। তবু তিনি থেমে থাকেননি। ক্যামেরার সামনে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন। যে কোনও চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন। হয়তো এই কাজই তাঁকে জীবনের অন্য খালি জায়গাগুলো ভুলিয়ে দেয়। ইন্দ্রানীর জীবনের এই গল্প অনেক নারীরই বাস্তব—যাঁরা প্রফেশনাল সাফল্যের মাঝেও একাকীত্ব বয়ে বেড়ান।