অভিনয় ও শ্যুটিংয়ের ফাঁকেই হাসপাতালে পৌঁছনোর তাড়াহুড়োই যেন তাঁর দৈনন্দিন রুটিন, এ কথাই খোলসা করেছেন ‘ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত’ (Rituparna Sengupta)। মাকে হারানোর কষ্ট (Mother Died) আর দায়িত্বের টানে অভিনয় জগত ফেরা, তার কাছে হয়ে উঠেছে অসহনীয়। শুটিং শেষ করেই হাসপাতালের পথে, কিছু সময় হাতে পেলে মা-র কেবিনে ছুটে যাওয়া—এই সব নিয়েই লিখেছেন তিনি এক আবেগঘন খোলা চিঠিতে। কাজ চললেও মনে একরকম স্থিরতা নেই, প্রতিটি মুহূর্তে মায়ের কথা ভেসে ওঠে, এবং সেই বেদনায়ই তিনি লেখায় প্রকাশ করেছেন।
খোলাখুলি ভাষায় ঋতুপর্ণা বলেছে, এখনও নিজেকে ‘বড়’ মনে করতে চান না —মাকে হারিয়ে এমন এক শূন্যতায় ডুবে গেছেন তিনি যে তার তল খুঁজে পাচ্ছেন না। মায়ের হাসি, হালকা রাগ, অনুরোধ—সবই এতটাই মিস করেন যে শ্যুটিং শেষে ঘরে ফিরে এসতেই বারবার চোখে জল চলে আসে। রাতের নিস্তব্ধতায় কাঁদেন, কিন্তু বাইরের কাউকে দেখান না, মায়ের মতো বোঝে এমন কেউ নেই—মায়ের আশ্বাস, অভিমান, সব কিছুই এখন তার কাছে অমলিন স্মৃতি।
কেন এমন করে ছেড়ে গেছেন— এই প্রশ্নই বারবার ফিরে এসেছে তাঁর চিঠির পাতায়। চিঠিতে তিনি মায়ের ছোট ছোট অভ্যাসগুলোও তুলে ধরেছেন, “বাড়ির বারান্দার সেই নির্দিষ্ট কোণ, যেখানে গেলে আকাশটা খোলা লাগত, সমরেশ–সঞ্জীবর বইগুলো মায়ের প্রিয় ছিল। কে জানে সেই সব বই সেখানে মেলে কি না!” এমন সব জিজ্ঞাসায় ভরা তাঁর লেখাগুলো। মায়ের হাতে গড়ে ওঠা রুটিন, কার্নিশে বাসা বোনানো পাখিদের খেয়াল, জীবনের নানান কষ্ট তিনি চেপে রেখে সংসার সামলেছেন—এমন স্মৃতিগুলো উঠে উঠেছে ঋতুপর্নার কথায়।
আর সেই সব স্মৃতি বুকে নিয়ে তিনি প্রতিদিন চলছেন। তার ঝাপসা নীরবতার মাঝেই আছে এক অদ্ভুত আশা ও আকুতি—চিঠিতে তিনি মাকে অনুরোধ করেছেন, “যদি একবার ঠিকানা জানতাম, সেখানে গিয়ে আরেকবার তোমার কাছে আদর পেতাম মা!” মায়ের অপেক্ষার কথাটা, মায়ের বচনগুলো কেমন ছিল—সবই মনে পড়ে, এবং সম্ভবত সেই স্মৃতিই তাকে শক্তি দিচ্ছে। তাও তিনি মায়ের উদ্যেশ্য লিখলেন,“একটু অপেক্ষা, আমি আসছি!”–র মতো একান্ত আবেগের কথা।
আরও পড়ুনঃ “নায়িকা হইনি, তবু যা পেয়েছি, অনেক নায়িকাও পাননি… জানেন কেন?” জন্মদিনে অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী জানালেন নিজের জীবনের অজানা কাহিনী!
চিঠির শেষাংশে ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, মায়ের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তাঁর কাজ থেমে নেই। শুটিং চলছে, কিন্তু মায়ের স্মৃতি প্রতি মুহূর্তে আবেগী করে তুলছে। তিনি এই খোলা চিঠির মাধ্যমে মায়ের প্রতি কথা বললেও পাঠকদের কাছে একরাশ অনুরোধও তুলেছেন, “এই কঠিন সময়টা একটু নীরব শ্রদ্ধায় সম্মান করবেন।” মায়ের মধুর স্মৃতিটুকুই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় প্রেরণা, আর সেই স্মৃতি নিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন, সেই ত্যাগ ও স্নেহকে ধরে রাখাই এখন তাঁর একমাত্র কামনা।