জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

স্বপ্ন ছিল সংসার, বাস্তবে মিলল নির্যা’তন আর গর্ভ’পাতের দুঃসহ অভিজ্ঞতা! ভালোবাসার মোড়কে প্রতারণা, অভিনেত্রীকে একাধিক গর্ভ’পাতে বাধ্য করার অভিযোগ! অভিনয় জীবনে সাফল্য, ব্যক্তিগত জীবনে অভিশাপ!

চলচ্চিত্র জগতে বহু শিল্পীর জীবন যেমন আলোয় ভরপুর থেকেছে, তেমনই থেকে গেছে গভীর অন্ধকারের ছাপ। এরকমই এক অভিনেত্রী (Famous Actress) তিনি। পর্দায় তাঁর অভিনয় ভঙ্গি, আবেগ আর স্বতঃস্ফূর্ততার জন্য তিনি আজও স্মরণীয়। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একের পর এক যন্ত্রণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার। যাঁদের প্রতি তিনি হৃদয় উজাড় করে ভালবাসা দিয়েছেন, বারবার সেই সম্পর্কই ভেঙে তাঁকে দগ্ধ করেছে। জীবনের শেষ দিন অবধি তিনি যন্ত্রণা লুকিয়ে হাসিমুখে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন।

তাঁর জীবন কাহিনী তাই যেন এক অন্তহীন সংগ্রামের দলিল। অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ তাঁর শৈশব থেকেই স্পষ্ট ছিল। যদিও মায়ের মতো গান বেছে নেননি, ছোট থেকেই নাচে অনুরাগী ছিলেন ‘শ্রীবিদ্যা’ (Srividya)। ১৩ বছর বয়সে তামিল সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি, আর অল্পদিনের মধ্যেই নিজের পরিশীলিত নৃত্যভঙ্গি ও অভিনয়ের জোরে সবার নজর কাড়েন। ১৯৬৯ সালে মালয়ালম ছবিতে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি, যেখানে কিংবদন্তি অভিনেতা সাথিয়ানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। খুব দ্রুতই তামিল, তেলুগু ও মালয়ালম তিন ভাষাতেই তাঁর উপস্থিতি বিস্তৃত হয়।

পৌরাণিক চরিত্র থেকে শুরু করে সামাজিক ও মানসিক জটিলতায় ভরা নানা চরিত্রে শ্রীবিদ্যা নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তি দেখিয়েছেন। বিশেষ করে কেজি জর্জের ছবিগুলোতে তিনি এমন গভীরতা দেখান যা তাঁকে অন্য অভিনেত্রীদের থেকে আলাদা করে দেয়। কর্মজীবনের এই সাফল্যের আড়ালে ব্যক্তিগত জীবন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। প্রথম প্রেম কমল হাসানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাঙন তাঁর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। কমল নিজের ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিয়ে দূরে সরে যান, এবং পরে অন্য কাউকে বিয়ে করেন। এই ঘটনার পর শ্রীবিদ্যা চলচ্চিত্র পরিচালক ভরথনের কাছে কিছুটা শান্তি খুঁজেছিলেন।

কিন্তু সেই সম্পর্কও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। একসময়ের আত্মিক বন্ধন পরে ভেঙে গিয়েছিল, আরেকটি অধ্যায় যোগ হয়েছিল তাঁর ব্যর্থ প্রেমের তালিকায়। এই ভাঙনগুলো তাঁকে ভেতর থেকে বিপর্যস্ত করে তুললেও তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে কখনও থেমে যাননি। শ্রীবিদ্যার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায় আসে বিয়ের পর। চলচ্চিত্র প্রযোজক জর্জ থমাসকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বিয়ের পরপরই বুঝতে পারেন, জর্জের কাছে তিনি কেবল অর্থের উৎস ছাড়া আর কিছুই নন। আর্থিক প্রতারণা, শারীরিক নির্যাতন, এমনকি একাধিকবার জোর করে গর্ভপাত করানো— এসব সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।

তিনি যখন শেষমেশ সাহস করে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন, তখনও বাধা এসে দাঁড়ায় আইনের জটিলতা। দীর্ঘ ১৪ বছরের লড়াইয়ের পর তিনি মুক্তি পেলেও, জীবনের অনেকটা সময় এভাবেই কেটে যায়। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার পরও তিনি একা দাঁড়িয়ে থেকেছেন, লড়াই করেছেন, এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিল্পীর মতো জীবনের মঞ্চে টিকে থেকেছেন। মৃত্যুর আগে শ্রীবিদ্যার একটি ইচ্ছে ছিল, একবার কমল হাসানের সঙ্গে দেখা করা। কমল ছুটে এসে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেন। কী কথা হয়েছিল, কেউ জানে না, কিন্তু অনেকের বিশ্বাস, কমলই ছিলেন তাঁর প্রকৃত ভালোবাসা।

জীবনের সব আঘাতের মাঝেও শ্রীবিদ্যা মৃত্যুর আগে নিজের সমস্ত সম্পত্তি সমাজকল্যাণে ব্যবহার করার জন্য দান করে যান। তিনি চেয়েছিলেন গরিব শিশুদের জন্য একটি নৃত্য বিদ্যালয় তৈরি করতে। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর সেই উইল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় এবং মামলা আজও আদালতে ঝুলে আছে। তবে এসবের ঊর্ধ্বে থেকেও শ্রীবিদ্যার নাম মনে আসে তাঁর হাসি, তাঁর অভিনয় আর তাঁর অদম্য মানসিক শক্তির জন্য। সত্যিকারের শিল্পী যেমন কষ্ট লুকিয়ে আলো ছড়ান, শ্রীবিদ্যা তেমনই ছিলেন—অভিনয়ে দীপ্তিময়, জীবনে বেদনাময়।

srividya
Piya Chanda