জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“ছেলেমেয়েরা আমায় ‘হঠাৎ মা’ বলে ডাকত!” “মাতৃত্ব নিয়ে ভুল সিদ্ধান্তের আক্ষেপ আছে, অনেক অপূর্ণতা রয়ে গেল সন্তানদের নিয়ে!”— মাতৃত্ব নিয়ে পাপিয়া অধিকারীর অকপট স্বীকারোক্তি! সন্তানদের প্রসঙ্গ উঠতেই, চোখের কোনে জল!

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময় যাঁর নামের আগে ‘হট’ উপাধি যুক্ত হত, তিনি হলেন অভিনেত্রী ‘পাপিয়া অধিকারী’ (Papiya Adhikari)। একশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি, শুধু বাংলা নয়— তামিল ও ভোজপুরি সিনেমাতেও সমান উজ্জ্বল তিনি। তবে শুধুই সিনেমা নয়, যাত্রার মঞ্চেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। দেবীবরণ ছবির ‘বিবি পায়রা’র মাধ্যমে পাপিয়া আজও দর্শকের মননে জায়গা করে রেখেছে। অথচ কেরিয়ারের শুরুর দিকে চিত্রনাট্যকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার তাঁকে বলেছিলেন যে, তাঁর নাকি কোনও বিশেষ আকর্ষণ নেই।

কিন্তু নিজের প্রতিভা এবং অভিনয়ের জোরে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছিলেন অভিনেত্রী। আজ সিনেমার পর্দায় তাঁকে বেশি দেখা না গেলেও, নাট্যমঞ্চে এখনও তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত। পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনেও যুক্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী কথা বললেন একেবারে ব্যক্তিগত এক অধ্যায়ের। পাপিয়া জানান, মাতৃত্বের ক্ষেত্রে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, যার জন্য আজও তাঁর মনে আক্ষেপ রয়ে গেছে। কাজের ব্যস্ততায় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্বাভাবিক সময় কাটানো হয়নি, আর সেই অভাবই তাঁদের ডাকে প্রতিফলিত হয়েছিল।

নিজের জীবনের সেই দুঃখের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে ‘হঠাৎ মা’ বলে ডাকতো।” এই একটি সংলাপেই যেন ধরা পড়ে গিয়েছে এক মায়ের না-পারার যন্ত্রণা। অভিনয়ের কারণে একটানা বাইরে থাকতে হতো তাঁকে, ফলে সন্তানদের সঙ্গে কাটানো সময় হয়ে উঠত অত্যন্ত সীমিত। ফেরার পর তিনি চেষ্টা করতেন একদিনেই তাঁদের সব ইচ্ছেপূরণ করে দিতে, কিন্তু সেটা অনেক সময় অতিরিক্ত হয়ে যেত। অভিনেত্রীর কথায়, “বাচ্চারা যখন ছোট ছিল ওদের অনেক মিথ্যে কথা বলেছি, সরল মনের সুযোগ নিয়ে।

ফোন করলে বলতাম কালকে ফিরব অথচ দশ-পনেরো দিন বাদে ফিরতাম। তখন ফিরতাম একদিনেই সিনেমা দেখানো, রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো, জামা কিনে দেওয়া— এক কথায় ওরাও হাপিয়ে উঠতো। তখন আমার মনে হতো যে এতদিন ওদের থেকে দূরে ছিলাম, যতটা পারি সবটা করে ফেলতে হবে। কিন্তু এটা বুঝতাম না যে, ওদের জন্য অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে আমার চাওয়া গুলো। সন্তানদের শুধু প্রয়োজন ভালোবাসা আর মা-বাবার উপস্থিতি, অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটাই ছিল।

আমার বাচ্চারা কখনওই জামা-কাপড় বা খেলনা দাবি করেনি, কিন্তু আমি ভাবতাম এটা পেলেই হয়তো ওরা আমার না থাকার অপূর্ণতা ভুলে থাকবে।” এই স্বীকারোক্তি শুধু একজন মায়ের অপরাধবোধ নয়, বরং বুঝিয়ে দেয় সন্তানরা সবসময় কেবল বাবা-মায়ের ভালোবাসা আর উপস্থিতিই চায়। খেলনা বা জামাকাপড় নয়, তাদের কাছে গুরুত্ব পায় সঙ্গ। অভিনেত্রী শেষ পর্যন্ত অভিভাবকদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্তানদের জন্য অযথা অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই।

তাদের সঙ্গে সময় কাটানোই সবচেয়ে বড় উপহার। অভিনেত্রীর কথায়, “এখন অনুশোচনা হয়, তাই সকল মা-বাবাকে বলতে চাই– অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই। সন্তানদের মন বুঝতে শিখুন সময় কাটান তাতেই হবে।” কাজের কারণে দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে দূরে থাকা পাপিয়ার জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, আজও তার ছাপ রয়ে গেছে। একসময় সন্তানদের ‘হঠাৎ মা’ বলা ছিল অভিমান ও মজা, কিন্তু সেই নামেই লুকিয়ে ছিল শিল্পীর ব্যক্তিগত সংগ্রাম, ভালোবাসা এবং অনুশোচনার গল্প।

Piya Chanda