বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন অনেক নাম আছে যারা একসময় দর্শকের প্রিয় ছিলেন, কিন্তু আজ তাদের স্মৃতি যেন ভুলে যাওয়া সময়ের কোণে লুকিয়ে। সুখেন দাসও সেই তালিকায় আছেন। একজন পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়, কিন্তু আজ ক’জনই তাকে মনে রাখে? তার অভিনয় এবং পরিচালনার অনবদ্য অবদান আজও বাংলা সিনেমার ধারায় অম্লান।
সুখেন দাসের জন্ম কলকাতায় হলেও তার আদি বাড়ি হালিশহরে। পরিবার ব্যবসায়িক সূত্রে কলকাতায় এসেছিলেন। ছোটবেলায়ই তিনি নাটক ও অভিনয়ের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। তবে পারিবারিক আর্থিক সমস্যা এবং জীবনের কঠোর বাস্তবতা তাকে নানা ঝুঁকি নিতে বাধ্য করেছিল। বাবা ও মা মারা যাওয়ার পর অনাথ আশ্রম থেকে পালিয়ে রাস্তায় ঘুরে খুঁজে নিতেন ছোটখাটো কাজ করে নিজের জীবিকা। তারপর একটি দয়ালু চিকিৎসকের সাহায্যে তিনি খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা পেতেন, কিন্তু থিয়েটার এবং অভিনয়ের প্রতি তার আকর্ষণ থেমে থাকেনি। তিনি নিজের প্রয়াসে অভিনয় শেখা শুরু করেন, স্টুডিও হাউসের আশেপাশে ঘুরে কৌশল শেখা এবং প্রয়োগ করা যেন তার দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠেছিল।

১৯৪৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে সুখেন দাস পেয়েছিলেন প্রথম বড় সুযোগ। তার পরপর অভিনয় এবং পরিচালনার জার্নি শুরু হয়। ‘দাদা মনি’, ‘জীবন মরণ’, ‘প্রতিশোধ’, ‘স্বর্ণমহল’ ইত্যাদি সিনেমা তার পরিচালনায় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বাবা-ছেলের সম্পর্ক, খলনায়ক, নায়ক—প্রায় সব চরিত্রই তিনি অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কিশোর কুমারের সঙ্গে গান এবং অভিনেতাদের প্রতি তার দয়ালু মনোভাব তাকে সহকর্মীদের কাছে বিশেষ স্থান দিয়েছে। তিনি নিজের অতীতকে কখনো ভুলে যাননি, শুটিং ফ্লোরে সবার খাওয়া-দাওয়া খেয়াল রাখতেন, সবশেষে নিজে খেতেন।
সুখেন দাসের এবং সুচিত্রা সেনের সম্পর্ক ছিল বিশেষ। প্রথম পরিচয়টা শুরু হয়েছিল ‘ভালোবাসা’ সিনেমার সেট থেকে। একবার সুখেন দাস সুচিত্রা সেনের বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে গিয়ে ‘মান অভিমান’ ছবিতে অভিনয় করার অনুরোধ করলে সুচিত্রা সেন তাকে বাড়ি থেকে ফিরিয়ে দেয়, কারণ অভিনেত্রী ভেবেছিলেন সেই সময় তিনি বিরতি নেবেন অর্থাৎ তিনি আর কোন সিনেমা করবেন না, এবং একে একে সব পরিচালকদের ফিরিয়ে দিতে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ একের পর এক সিনেমায় কামাল ছোট্ট অনুমেঘার! ‘প্রজাপতি ২’ থেকে ‘স্বার্থপর’ একের পর এক প্রোজেক্টে দেখা মিলবে মিঠাইয়ের ছোট্ট মেয়ের! মহাখুশি দর্শকরা
এই ঘটনায় সুখেন দাস হতাশ হয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সেটের শুটিংয়ে অভিনয় শুরু হলে সব কিছু বদলে যায়। অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন নিজে শুটিং ফ্লোরে সুখেন দাসের অভিনয় দেখার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এবং বলেছেন, তুমি আরও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। এই ঘটনাই প্রমাণ করে সুখেন দাস এবং সুচিত্রা সেনের সম্পর্ক কতটা স্নেহময়ী ছিল।