জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

বাবার পথেই ছেলে! “মহাভারতের মহাযুদ্ধ নয়, এ এক নতুন দর্শন!”— নেটফ্লিক্সে উজান গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালিত ‘কুরুক্ষেত্র’ মুক্তি পেল অবশেষে! বিশ্বজোড়া প্রশংসা কুড়োচ্ছে তাঁর প্রচেষ্টা, গর্বিত টলিপাড়া!

যাদবপুর দিয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে, অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন টলিউড পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kaushik Ganguly) ছেলে উজান গঙ্গোপাধ্যায়ের (Ujaan Ganguly) স্বপ্নপূরণ আজ গোটা বিশ্বের দরবারে। বিদেশে ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই, হঠাৎ আন্তর্জাতিক সংস্থা নেটফ্লিক্সের তরফে প্রস্তাব আসে কাজের। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল এক নিরলস প্রচেষ্টা। টানা দু’বছর ধরে তিনি ব্যস্ত থেকেছেন গবেষণায়, গল্প লিখতে, অ্যানিমেশনের কাজ সাজাতে।

সেই সমস্ত প্রচেষ্টার ফল অবশেষে প্রকাশ্যে এসেছে। অক্টোবরের ১০ তারিখে মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত ও লেখা সিরিজ ‘কুরুক্ষেত্র’ (Kurukshetra)। আচ্ছা ‘কুরুক্ষেত্র’ নামটি শুনলেই চোখের সামনে কি ভেসে ওঠে? এক অনন্ত যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে ধর্ম-অধর্মের সংঘর্ষের গাথা, যা কিনা মহাযুদ্ধ মহাভারত নামেও খ্যাত। উজান সেই পুরাণের মর্মবস্তুকেই নতুনভাবে ছুঁয়েছেন নিজের সৃষ্টিতে। তাঁর মতে, কুরুক্ষেত্র শুধু ইতিহাস নয়, প্রতিটি মানুষের জীবনের সংগ্রামের প্রতীকও বটে।

তাই সিরিজটি কোনও পৌরাণিক গল্প নয়, বরং সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গিতে ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য-অকর্তব্যের সীমারেখা খোঁজার এক মাধ্যম। এদিন সিরিজ মুক্তির পর উজান বললেন, “ছ’বছর আগে যখন আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন থেকেই অ্যানিমেশনের প্রতি টান ছিল। স্কুল-কলেজে নানা ম্যাগাজিনে আমার আঁকা কার্টুন প্রকাশ পেত। সেই নেশা থেকেই আমি কিছু স্যাম্পল নিয়ে হাইটেক স্টুডিওতে সুব্রত রায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন অ্যানিমেশন নিয়ে কিছুই জানতাম না, শুধু কাজ শেখার আগ্রহ ছিল।

আজ আমাদের দু’জনের সেই ইচ্ছেটাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল।” তাঁর কথায়, নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে নিজের তৈরি প্রজেক্ট দেখতে পাওয়া এক অনন্য অনুভূতি, যা শুধুমাত্র একাগ্রতা ও টিমওয়ার্কের ফল। উজান আরও জানিয়েছেন, মহাভারতের প্রতি আকর্ষণ তাঁর ছোটবেলা থেকেই। টেলিভিশনে যখন জনপ্রিয় সিরিয়ালটি চলত, তখন নিজেকে কখনও ভীম, কখনও অর্জুন ভাবতেন। তবে, বাংলা সাহিত্যর ছাত্র হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ‘মহাভারত’ কেবল যুদ্ধের গল্প নয়, এক গভীর রাজনৈতিক ও দার্শনিক পাঠ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি উপলব্ধি করেছেন, সেই গ্রন্থ আসলে মানুষের মনের জটিলতা বোঝার উপন্যাস, যেখানে নায়ক-খলনায়কের সীমারেখা প্রায়ই অস্পষ্ট। আজ তাঁর ‘কুরুক্ষেত্র’ সেই উপলব্ধিরই এক আধুনিক প্রতিফলন। পুরাণ, দর্শন, এবং সমসাময়িক সমাজের বোধকে একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে এই সিরিজ। নেটফ্লিক্সের আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা থেকে এমন একটি কাজের স্বীকৃতি শুধু উজানের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এক প্রজন্মের নতুন চিন্তার প্রতিফলনও বটে।

Piya Chanda