আজ তাঁর নামটা বাংলা ধারাবাহিক দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে স্টার জলসায় ‘ও মোর দরদিয়া’ (O Mor Dorodiya)। এই ধারাবাহিক ইতিমধ্যেই দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠে, নায়ক হিসেবে ‘বিশ্বজিৎ ঘোষ’কে (Biswajit Ghosh) দেখে মুগ্ধ সবাই। অথচ, এই সাফল্যের পেছনে যে কত বছর লড়াই লুকিয়ে আছে, সেটা জানলে অবাক হতে হয়। এদিন এক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে অভিনেতার শুরুর দিনের গল্পটা। শুরুর দিকে গর্ব করে সবাইকে জানাতেন তাঁকে টিভিতে দেখা যাবে, অথচ পা ছাড়া কিছুই দেখা যেত না!
এদিন তিনি নিজেই জানিয়েছেন, “আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে পৌঁছাতে লেগেছে ১৪টা বছর।” একসময় টিসিএসে চাকরি করতেন, কিন্তু অভিনয়ের টানে সেই চাকরি ছেড়ে দেন নিঃসংকোচে। তাঁর কথায়, “যেখানে মন নেই, সেখানে টিকে থাকা যায় না।” অভিনয়ের জগতে তাঁর শুরুটা কিন্তু আজকের মতো ঝলমলে ছিল না। ২০০৯ সালে স্টার জলসার ‘ওগো বধু সুন্দরী’ ধারাবাহিকের ‘কমল’ চরিত্রে প্রথম সুযোগ পান। সেই সময়টা ছিল শেখার, বোঝার, নিজের জায়গা তৈরি করার।
চরিত্রটা নরম, সংবেদনশীল, অথচ গভীর। পরে যখন কয়েকটি ধারাবাহিকে একের পর এক অভিনয় করতে থাকেন, মনে হয়েছিল হয়তো এবার পথটা মসৃণ হবে। কিন্তু বাস্তব ততটা সহজ ছিল না। কাজের ফাঁকে অনিশ্চয়তা, ব্যর্থতা, অপেক্ষা— সবই ছিল তাঁর জীবনের অংশ। এই লম্বা পথ চলার মাঝেই আসে ‘রাজযোটক’। ২০১৪ সালের সেই ধারাবাহিকই তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। গ্রামের এক সরল ছেলের চরিত্রে তিনি এমন বাস্তবতা আনেন যে, দর্শক চরিত্রটার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়।
একদিন এক অচেনা মহিলা তাঁকে রাস্তায় থামিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন— কারণ, তিনি ভেবেছিলেন পর্দার সেই ছেলেটা যেন সত্যিই লাঞ্ছিত হচ্ছে বাস্তবেও। সেই মুহূর্তেই বিশ্বজিৎ বুঝেছিলেন যে অভিনয় শুধু পেশা নয়, এটা মানুষ ছোঁয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা। তবে জনপ্রিয়তার মাঝেও তাঁর জীবনটা সহজ নয়। প্রতিদিনের ব্যস্ত শুটিং, ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ক্যামেরার সামনে কাটানো— সব মিলিয়ে পর্দা ও বাস্তবের সীমারেখা প্রায় মুছে যায় তাঁরও। তিনি বলেন, “একটা সময় পরে চরিত্রটাই আমি হয়ে যাই।”
আরও পড়ুনঃ নায়ক-প্রযোজকের প্রেমিকার সঙ্গে সম্মুখ সমরে ইধিকা! এবার শাকিবের নায়িকা হতে রুক্মিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামছেন অভিনেত্রী?
কোনও গ্ল্যামার, পার্টি, প্রচারের ঝলকানি নেই তাঁর জীবনে। পিআর কৌশল জানেন না, তবুও মানুষ তাঁকে চেনে, ভালোবাসে। কারণ তিনি নিজেকে সাজিয়ে দেখান না, কৃত্রিম কোনও মুখোশ পরেন না। আজ যখন তিনি স্টার জলসার মুখ্য নায়ক, তখনও সেই আগের মানুষটাই রয়ে গেছেন। নিজের অর্জনকে টিআরপি দিয়ে নয়, মানুষের ভালোবাসায় মাপেন। সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে সুযোগের কথাও ভাবেননি খুব একটা, কারণ ধারাবাহিকই এখন তাঁর পৃথিবী। এই একাগ্রতাই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে অনেকের থেকে।
