বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ‘রিনি বিশ্বাস’ (Rini Biswas), যিনি একদিকে মঞ্চে বা ক্যামেরার সামনে যেমন আত্মবিশ্বাসী, অন্যদিকে কলমের জগতে তেমনি নিভৃত অথচ স্পষ্ট স্বর তুলে ধরেন। যাদবপুরে পড়াকালীনই তাঁর শিল্পচর্চার শুরু, আর সেই সময় থেকেই যেন শব্দ, অনুভূতি আর প্রকাশ একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। উপস্থাপনা, অভিনয়, আবৃত্তি— প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর দক্ষতা অসীম। তবে রিনির গল্প শুধু সাফল্যের নয়, জীবনের ওঠাপড়ারও। লেখালেখির ভেতর দিয়ে তিনি যে নিজস্ব পৃথিবী গড়ে তুলেছেন, সেখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যেমন উঠে আসে, তেমনি থাকে আত্মসমালোচনার স্বরও।
মাতৃত্ব, কর্মজীবন আর সংসারের ভারসাম্য নিয়ে তাঁর লেখায় এক ধরনের স্বচ্ছতা আছে— কোনও সাজানো ভাষা নয়, বরং একেবারে বাস্তব অনুভূতির বয়ান। ব্যক্তিগত জীবনে এক সময় সম্পর্কের টানাপোড়েন ও বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতাও তাঁর জীবনের অংশ হয়ে গেছে, কিন্তু সেই ভাঙনকেও তিনি প্রকাশ করেছেন সংযমের সঙ্গে। তাঁর কলমে এই যন্ত্রণা পরিণত হয়েছে এক ধরনের দৃঢ়তায়, যেখানে নারী শুধু মায়ের বা স্ত্রীর পরিচয়ে আটকে থাকে না, বরং নিজের অস্তিত্বের স্বর খুঁজে পায়।
সহকর্মী থেকে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম করে পিনাকিকে বিবাহ করেছিলেন রিনি। তাদের একটি পুত্র সন্তানও হয়, তার নাম পাবলো। পরবর্তীতে সেই সম্পর্কে মতবিরোধ থেকে বিচ্ছেদের মত চূড়ান্ত পরিনতি ঘটে। এদিন বিবাহ এবং বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বিয়ে মানে আমার কাছে কোনও দাসখত লিখে দেওয়া নয়! বিয়ে একটা সামাজিক স্বীকৃতি যে, এরপর দু’জনে মিলে ভালো থাকবো। এবার, মানুষের মন তো রে বাবা! আজ বাদে কাল মনে হতেই পারে যে, আমি এর সঙ্গে ভালো নেই, বরং অন্যের সঙ্গে ভালো থাকব।
আমার সঙ্গীর যদি সেটা মনে হয়ে থাকে, আমি কে ভাই তাকে আটকে রাখার? আমার সন্তান আছে, তুমি আমাকে একদিন ভালোবেসে কথা দিয়েছিলে সঙ্গে থাকবে, ইত্যাদি বলে আটকে রাখার কী কোনও দরকার বা অধিকার আছে? আলাদা হতে চাইছে বা সে আরও একজনকে ভালোবাসছে যখন, তার মানে আমার প্রতি তো তার আর ভালোবাসা নেই! তাহলে আমার জন্য তো এটাই সম্মানজনক যে, আমি সেই সম্পর্কটা থেকে সরে আসি। কাউকে জোর করে সম্পর্কে আটকে রাখার মনোভাবে বিশ্বাসী নই আমি!”
অনেকেই যেমন রিনির এই স্পষ্টবাদীতার প্রশংসা করেছেন। তেমন অধিকাংশ মানুষ সমালোচনাও করেছেন। সমাজ মাধ্যমে রীতিমতো মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ যেমন বলেছেন, “আপনার এই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে আরও পঞ্চাশ বছর লেগে যাবে কম করে। এই জন্য চাই সঠিক শিক্ষা, শুধু একাডেমিক নয়, সংস্কার জনিত সহবৎ শিক্ষা।” অন্যজনের মতে, “তাহলে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? বিয়ে মানে কি শারীরিক মেলামেশা ব্যাস? আর আপনি যাকে ভালোবাসা বলছেন সেটা শরীরের খিদে ওটা ভালোবাসা নয়!
আরও পড়ুনঃ “আমি এখনও ভয় পাই… সাহস হয় না ওই দিকটায় পা বাড়াতে!”— কোন অভিজ্ঞতার থেকে এমন বললেন অপরাজিতা আঢ্য? জীবনের কোন দিকটা নিয়ে আজও সংশয়ে থাকেন অভিনেত্রী? জানলে অবাক হবেন!
আজ একজনের সঙ্গে, এবার কাল অন্য একটা!” একজন বলেছেন, “আমরা মানুষ। কুকুর বেড়াল বাঘ সিংহ নই। সনাতন ধর্মে বিবাহ অর্থ চুক্তি নয় প্রতিজ্ঞা। চুক্তি ভঙ্গ করা যায় প্রতিজ্ঞা নয়। সুখে-দুঃখে আমরা একসাথে মিলে লড়ব, একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলে তাকে বিশ্বাসঘাতক বলা হয়!” তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কেউ বলেছেন, “এই ধরনের মানসিকতা যাদের তাদের সন্তান নেওয়া উচিৎ নয়, একটা শিশুর বাবা মা উভয়কেই প্রয়োজন!” এই বিষয়ে আপনাদের কী মতামত? জানাতে ভুলবেন না!
