বাংলা সিনেমা জগতে এক ভয়ঙ্কর শত্রু ঘুরে বেড়াচ্ছে বছরের পর বছর — নাম তার পাইরেসি। এই চোরের হাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি টাকার ব্যবসা। শোনা যায়, কলকাতার এক ‘খোকাবাবু’ প্রতি শুক্রবার সিনেমা হলে যান, হাতে পপকর্নের বাক্স। কিন্তু সেটিই তাঁর অস্ত্র! বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছোট ক্যামেরায় নতুন ছবি রেকর্ড করেন তিনি। তারপর সেটি পৌঁছে যায় ইউটিউব ও বিভিন্ন অবৈধ সিনেমা সাইটে। প্রেক্ষাগৃহে টিকিট কেটে ছবি দেখার দরকার পড়ে না, এক ক্লিকেই দেখা যায় চুরি করা সিনেমা।
এই পাইরেসির জাল এতটাই বড় যে এতে জড়িয়ে পড়েছেন দেশ-বিদেশের মানুষ। প্রযোজকরা অভিযোগ করেন, মুক্তির দিনেই ছবি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। কেউ কেউ এমনও বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রযোজকরা বেশি টাকা দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছবি ফাঁস করান! পাইরেসির এই র্যাকেট শুধু ছবি চুরি করে না, বরং হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ও করে। অনেক প্রযোজনা সংস্থা তাই লোকচক্ষুর আড়ালে টাকা দিয়ে এই চক্রকে থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ফল শূন্য।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, এই চুরির সূত্র বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছবির প্রথম লিঙ্ক সেখান থেকেই আসে। ভারতের বাংলা ছবি ও দেশে মুক্তি পায় না, কিন্তু মুক্তির দু’দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের অনেকে তা অনলাইনে দেখে ফেলেন। প্রযোজক অশোকা ধানুকা বলেন, “বাংলাদেশে ৫-১০ হাজার টাকায় ছবি টুকে বিক্রি করা হয়, তারপর তাতে বিজ্ঞাপন লাগিয়ে আয় করা হয়। এটা একেবারে ব্যবসা।” অর্থাৎ, বাংলা সিনেমার পাশে চলছে এক সমান্তরাল ‘পাইরেসি ইন্ডাস্ট্রি’।
তবে সব প্রেক্ষাগৃহ মালিক এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেউ বলছেন, এখন আর প্রেক্ষাগৃহে পাইরেসি হয় না। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, আসলে এই চুরি থামানোই যাচ্ছে না কারণ প্রমাণ পাওয়া কঠিন। পরিচালকরা বলেন, “আমরা অভিযোগ করলে মানুষ চুরি করা ছবিই দেখতে যাবে, আসল ছবির দর্শক কমে যাবে।” তাই অনেক প্রযোজক চুপ করে থাকেন, যেমন নির্যাতিতার পরিবার লোকলজ্জায় চুপ থাকে। ফলে অপরাধীর সংখ্যা আরও বাড়ে, ক্ষতি হয় সিনেমা শিল্পের।
আরও পড়ুনঃ “সম্মান থাকতে থাকতেই নাকি শেষ হচ্ছে জগদ্ধাত্রী”— এই মন্তব্যেই তোলপাড় সিরিয়ালপ্রেমী মহল! প্রিয় জুটি জগদ্ধাত্রী-স্বয়ম্ভুকে হারানোর আশঙ্কায় ভক্তদের মন ভারী, তাহলে কি সত্যিই শেষ হতে চলেছে জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’? কী জানালেন রূপসা চ্যাটার্জি?
বাংলা ছবির এই ক্ষতি শুধু দেশে নয়, বিদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলছে। প্রবাসী বাঙালিরা বলছেন, তাঁদের কাছে জনপ্রিয় বাংলা ছবি পৌঁছনোর আগেই সেগুলো অনলাইনে দেখা হয়ে যায়। এক প্রযোজক বলেন, “আমেরিকার পরিবেশকও বলেছিল, যে ছবিগুলো আমি দেখাতে চাই, সেগুলো সবাই আগেই অনলাইনে দেখে ফেলেছে।” সেন্সর বোর্ড ও সরকারি প্রদর্শনের জন্য এখনো ছবির ডিভিডি পাঠানো হয়, যা সহজেই টুকে নেওয়া যায়। অথচ অনলাইন পাসওয়ার্ড সিস্টেম চালু করলে এই বিপদ অনেকটা কমবে। এখন বাংলা সিনেমাকে বাঁচাতে সবচেয়ে দরকার সেই অদৃশ্য চোরটিকে ধরা — যে দিনে দিনে শেষ করে দিচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির প্রাণ।
