এক সময় বাংলা সিনেমার পর্দায় মিষ্টি, লাজুক ‘ছোটবউ’ হিসেবে দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন দেবিকা মুখোপাধ্যায়। অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালিত ‘ছোটবউ’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঘরের মেয়ে। কিন্তু রুপোলি পর্দার সেই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক তীব্র ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প, যা সম্প্রতি অভিনেত্রী নিজেই শেয়ার করলেন নিবেদিতা অনলাইন ইউটিউব চ্যানেলের এক সাক্ষাৎকারে।
আবেগভরা গলায় দেবিকা জানালেন, বিয়ের পর দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেন্সে একা থাকতে হতো তাঁকে, কারণ তাঁর শাশুড়ি তাঁকে একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। “আমার বর ভাস্কর একমাত্র ছেলে। মা ছেলেকে আলাদা করে রাখতে চাইতেন, আমাকে মোটেও পছন্দ করতেন না। তাই বাধ্য হয়েই আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতাম,” বললেন অভিনেত্রী। লন্ডনে চার-পাঁচ বছর কাটিয়ে ফিরে এসে এমন পরিস্থিতি সামলানো তাঁর পক্ষে সহজ ছিল না।
দেবিকা জানান, স্বামীর সঙ্গে বিদেশে থাকাকালীন ধীরে ধীরে সিনেমার জগত থেকে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দেশে ফিরে একা জীবনে নতুন পথ খুঁজে পেতে শুরু করেন যাত্রা করা। “স্বাধীনভাবে রোজগার করতে চেয়েছিলাম, আর নিজের মনও একটু ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম,” বললেন তিনি। তবে জীবনের সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসার সময়ের সেই দৃশ্য — “চারটে স্যুটকেসের দুটো নিয়ে আমি নেমে যেতাম লেক গার্ডেন্সে, আর ভাস্কর যেত আনোয়ার শাহ রোডে, শ্বশুরবাড়িতে।”
অভিনেত্রীর কথায়, ভাস্করের আগের বিয়ে তিন মাসের মধ্যেই ভেঙে গিয়েছিল। তার পরই আলাপ হয় দেবিকার সঙ্গে, আর কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের বিয়ে। কয়েক বছর লন্ডনে সংসার করার পর দেশে ফিরে স্বামী ভাস্কর একটি নার্সিংহোম খোলেন, কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে পারেননি। আর্থিক সংকটে পড়ে যান দু’জনে।
আরও পড়ুনঃ অসুস্থতা কাটিয়ে শুটিং ফ্লোরে ফিরলেন জীতু! ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর সেটে বন্ধুকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বাস কিঙ্কর অভ্রজিতের
দেবিকা জানান, “২০১৫ সালে ওঁর ব্যবসা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পরের বছরই ভাস্করের স্ট্রোক হয়, তারপর থেকে তিনি প্যারালাইসিসে ভোগেন। আজও ফিজিওথেরাপি চলছে, ধীরে ধীরে একটু হাঁটতে পারেন, কথা বলেনও।” জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলো পেরিয়ে আজও হাসিমুখে দিন কাটানোর চেষ্টা করছেন পর্দার প্রিয় ‘ছোটবউ’— তাঁর গল্প যেন এক নিঃশব্দ অনুপ্রেরণা।
