শুরুর দিকে ধারাবাহিক ‘কুসুম’ (Kusum) ছিল এমন এক গল্প, যেটা জি বাংলার (Zee Bangla) দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছিল সহজ-সরল আবেগে। গ্রামের এক মেয়ের স্বপ্ন দেখা, নিজের চেষ্টায় সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলার সাহস — এই বার্তাই ছিল ধারাবাহিকটির মূল ভরকেন্দ্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বাস্তবতা যেন ম্লান হয়ে এখন গল্পের জায়গা নিয়েছে বিতর্ক আর অস্বস্তি। কুসুমের আচরণ দর্শকদের কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছে। যেভাবে সে রাতুলকে বিয়ে না করে আয়ুষ্মানকে নিজের স্বামী বলে দাবি করছে, তাতে দর্শকদের সহানুভূতির জায়গায় এসেছে বিরক্তি।
ঘটনার শুরু একেবারেই অবিশ্বাস্য মোড় থেকে। একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিল কুসুম ও আয়ুষ্মান, যেখানে তারা দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করছিল। দৃশ্যের প্রয়োজনে আয়ুষ্মান কুসুমের সিঁথিতে সিঁদুর পরায়। এখানেই সমস্যা শুরু! এই অভিনয়ের দৃশ্যকেই কুসুম নিজের জীবনের বাস্তব বলে ধরে নেয়। আয়ুষ্মান বারবার বোঝায় এটা মিথ্যে, কিন্তু কুসুমের কাছে ওটাই জীবনের বড় সত্যি! তার চোখে আয়ুষ্মানই এখন স্বামী, বাকিদের কাছে যতই সে ভুল হোক না কেন।
এই মানসিক জেদই এখন পুরো ধারাবাহিকের কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে রাতুল, যে মানুষটিকে কুসুমের বাবা বহুদিন আগে থেকে পাত্র হিসেবে ভেবেছিল, সে সত্যিই কুসুমকে মন থেকে ভালোবাসে। আর্থিকভাবে হয়তো দুর্বল, কিন্তু মানসিকভাবে সে স্থির, সরল, ভালোবাসায় পূর্ণ। কিন্তু কুসুমের কাছে সেই ভালোবাসা মূল্যহীন। বিয়ের দিন সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তার মন আয়ুষ্মানের কাছে বাঁধা। অপমানিত ও ব্যথিত রাতুল তখন কুসুমের বাবাকে ফোন করে জানায়, সে আর এই বিয়ে করতে পারবে না।
কিন্তু কারণ হিসেবে জানায়, “কুসুম অশিক্ষিত, গ্রাম্য মেয়ে, ওর থেকে অনেক ভালো মেয়েই আমার প্রাপ্য।” অথচ সকলেই জানে, আসলে সে ভেঙে পড়েছে, অপমান গোপন করতে মিথ্যে শক্তির মুখোশ পরেছে। এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় আঘাত পান কুসুমের বাবা। মেয়ের দ্বিতীয় বিয়েও ভেঙে যাওয়ায় তিনি একেবারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। গাঙ্গুলী বাড়ির অনেকেই কুসুমকে অপমান করে, নানা কথায় দগ্ধ করে। এই আঘাত সহ্য করতে না পেরে আ’ত্মহ’ত্যার চেষ্টা করেন কুসুমের বাবা। অনেক কষ্টে তাঁকে বাঁচানো গেলেও, কুসুমের জেদ তখনও অটুট!
সে বাবাকে জানিয়ে দেয়, আর বিয়ে করবে না। মনে মনে আয়ুষ্মানই তার স্বামী, কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বোঝানোর ক্ষমতা বা সাহস তার নেই। এই পর্ব প্রকাশ্যে আসতেই সমাজ মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দর্শকরা। কেউ লিখেছেন, “কুসুমের কাছে ওর বাপ মর’লেও কিছু না, বাপের কথা ভাবলে বড়লোকের বউ হওয়া যায় নাকি!” আবার কারও মন্তব্য, “গ্রামের মেয়ে হলেও নকল আর আসল বিয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝে না?” কেউ কেউ তো সরাসরি বলেছেন, “কুসুম লোভী, পায়ের জুতো মাথায় তুললে এর ফলই হয়।”
আরও পড়ুনঃ ‘পরিণীতা’কে পেছনে ফেলে এই সপ্তাহের টিআরপির শীর্ষে পরশুরাম | হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে স্টার জলসার ‘চিরসখা’ ও জি বাংলার ‘জগদ্ধাত্রী’র মধ্যে! ট্রেন্ডিংয়ে দর্শকের মন জয় করেছে দাদামণি! তালিকা থেকে বিদায় নিল ‘ফুলকি’
অনেকেই মনে করছেন, গরিব পাত্র হলে সে এমনটা করত না, আয়ুষ্মানের টাকাই নাকি তার চোখে ঢেকেছে! “রাতুল যদি বড়লোক হত তাহলে কুসুমের কোনও সমস্যা হতো না বিয়ে করতে, যেহেতু আয়ুষ্মানের অনেক টাকা তাই বাবা মরে গেলেও মেয়ের কোনও যায় আসে না।” একজন বলেছেন, “এই কাজের মেয়ে যতবার ফটোশুটে করবে ততোবারই বিয়ে এক একজনের সাথে হয়ে যাবে! তাহলে কি সবাইকে স্বামী মনে করবে?” সব মিলিয়ে, একসময় যে ধারাবাহিক মানুষকে সাহস ও আত্মসম্মানের পাঠ দিত, আজ সেটা নিয়েই হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে প্রবল ক্ষোভের ঝড়।
