জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

হাতের নোয়া খুলতেই আয়ুষ্মানের বিপদ, তড়িঘড়ি স্বামীর মঙ্গল কামনায় ‘সধবার সাজে’ সাজার সিদ্ধান্ত কুসুমের! আধুনিক সময়েও অন্ধবিশ্বাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে জি বাংলার ‘কুসুম’! এমন মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের প্রচার আজকের প্রেক্ষাপটে কতটা প্রাসঙ্গিক? সমাজকে ভুল বার্তা দিচ্ছে বাংলা ধারাবাহিক?

জি বাংলার ‘কুসুম’ (Kusum) ধারাবাহিক প্রথমদিকে একটা সাধারণ মেয়ের সহজ-সরল সংগ্রামের গল্প হিসেবে দর্শকদের মন জয় করেছিল। সেই মেয়েটি সমাজের টানাটানি, লোকের কথার ভয় না পেয়ে নিজের পথে হাঁটত– যা অনেকেই প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু গল্প যত এগিয়েছে, গল্প যেন অন্যখাতে মোড় নিয়েছে। যে বাস্তবতার জন্য এটি জনপ্রিয় হয়েছিল, ক্রমে সেই জায়গা দখল করেছে কুসুমের অদ্ভুত জেদ আর অপ্রয়োজনীয় নাটকীয় মোড়। ফলে অনেক দর্শকই এখন ভাবছেন, গল্পটা সত্যিই কি আর সেই জায়গায় আছে?

এই অস্বাভাবিকতার শুরু হয় একেবারে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একটি বিজ্ঞাপনের শ্যুটে আয়ুষ্মান আর কুসুম বিয়ের দৃশ্যে অভিনয় এবং সেখানেই কুসুমের সিঁথিতে সিঁদুরকে কেন্দ্র করে। শ্যুটের বাইরে ঘটনাটার কোনও অর্থ নেই, কিন্তু কুসুম সেটাকেই বাস্তব বিয়ে ধরে নেয়। আয়ুষ্মান বারবার বোঝাতে চাইলেও কুসুম বিশ্বাস করে যে এই সিঁদুরই তার ভাগ্য নির্ধারণ করেছে। এখান থেকেই শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি আর রাতুলের সঙ্গে তার সম্পর্কও আরও জটিল হতে থাকে।

রাতুল তখন মন থেকে কুসুমকে বিয়ে করতে চাইছিল, বাবার ইচ্ছেও ছিল তাই। কিন্তু বিয়ের আগে কুসুম জানিয়ে দেয়, তার নাকি ইতিমধ্যেই বিয়ে হয়ে গেছে। অপমান আর দুঃখে রাতুল অনেক কটু কথা বললেও আসলে সে আঘাত সামলানোর পথটাই খুঁজছিল। এই পুরো পরিস্থিতিই ভেঙে দেয় কুসুমের বাবাকে। সমাজের বিদ্রুপ, লোকের কথা আর মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার লজ্জা– সব মিলিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এখানেই গল্পটা আরও অন্ধকার মোড় নেয়। সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি দেখা যায় নতুন প্রোমোতে।

কুসুম অনেকটা দেরিতে বুঝতে পারে জোর করে সম্পর্ক ধরে রাখা যায় না এবং সে সিঁদুর মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক তখনই আয়ুষ্মানকে গাড়ি ধাক্কা দেয় এবং বৃষ্টিতে কুসুমের সিঁদুরও ধুয়ে যায়। কুসুম ধরে নেয় এটা কোনও অশুভলক্ষণ। এরপর সে ছুটে যায় সেই গাছতলায় যেখানে নোয়া খুলে রেখেছিল। কারণ তার বিশ্বাস, নোয়া খোলার কারণেই নাকি দুর্ঘটনা ঘটেছে! তাই আবার ‘সধবার সাজ’ পরে স্বামীর মঙ্গল কামনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। অথচ প্রশ্নটা এখানেই, একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সিঁদুর-নোয়া ‘সধবা সাজগোজ’ কি সত্যিই প্রয়োজন?

ভালোবাসা কি এভাবেই প্রমাণ হয়? বাস্তবে যারা বিভিন্ন কারণে শাঁখা-সিঁদুর পড়তে পারেন না, তারা কি স্বামীর মঙ্গল চায় না? যে বিয়েটাই ছিল অভিনয়ের অংশ, সেটাকে সত্যি ধরে নিয়ে কুসুমের এই অন্ধবিশ্বাস কি আধুনিক সময়ে মানানসই? আজকের যুগে যখন মানুষ কুসংস্কার ভাঙতে চায়, তখন জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলো উল্টে সেই কুসংস্কারকেই শক্ত করে তুলছে আর এটাই সবচেয়ে হতাশার বিষয়। গল্প যত এগোচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে যে অন্ধবিশ্বাস ও নাটকীয়তাই যেন এখানে মূল চালিকা শক্তি। তাই দর্শকের অনেকেই ভাবছেন, এটি কি সত্যিই সেই সাহসী কুসুমের গল্প, নাকি এখন শুধু কুসংস্কার ছড়ানোর আরেকটা মাধ্যম?

Piya Chanda