জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“গ্রামের লোক অশিক্ষিত নয়, তারাও মূল্যবোধের সিনেমা দেখে” স্টার ইমেজ নয়, মানুষের অভিনেতা হয়ে ওঠার বার্তা সমাজবোধে বিশ্বাসী অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী! অভিনয়ের বাইরেও মানবিক মূল্যবোধ কীভাবে দর্শকের মনে গেঁথে যায়, জানালেন তিনি!

টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘সব্যসাচী চক্রবর্তী’র (Sabyasachi Chakroborty) নাম শুনলেই প্রায় সকলের মনে প্রথম উদ্ভাসিত হয় ‘ফেলুদা’র চরিত্র। তবে তাঁর কেরিয়ারের শুরুতে মানুষ তাঁকে সেই পরিচয়েই জানত না। বাংলা বিনোদন জগতে তিনি প্রথম পরিচিতি লাভ করেন ‘তেরো পার্বণ’ ধারাবাহিকে ‘গোরা’ চরিত্রের মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে, বৃহস্পতিবার করে রাত আটটায় এই ধারাবাহিক বাঙালির সান্ধ্যকে নতুন রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিল। গোরা চরিত্রের আন্তরিকতা এবং স্বভাব দর্শকদের হৃদয়ে অমোঘ ছাপ রেখেছে আজও।

শেষ দৃশ্যে যখন গোরা আবার আমেরিকায় ফিরে যায়, তখন বহু দর্শকের চোখে জল! এভাবেই জন্ম নেয়, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। তাঁর অভিনয় জীবনে ফেলুদা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে ঠিকই। ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘কাকাবাবু’ প্রতিটি কাজেই তিনি নিজের স্বকীয় ছাপ রেখেছেন। তবে ফেলুদা চরিত্রের জনপ্রিয়তা যেন আকাশছোঁয়া। এই চরিত্রে তার প্রাঞ্জল ও চতুর অভিনয় দর্শক বিশেষ পছন্দ। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র থেকে টেলিভিশনের প্রতি তাঁর অবদান বাংলা বিনোদন জগতের ইতিহাসে অনেকখানি।

অভিনয়ের দীর্ঘ যাত্রায় তাঁকে ঘিরে যেসব আঞ্চলিক ও সাধারণ মানুষের স্নেহ তৈরি হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে মূল্যবোধ নির্ভর গল্পের সঙ্গে তাঁদের গভীর যোগ। গ্রামের মানুষকে অনেকেই অকারণে ‘অশিক্ষিত’ ভেবে বসে থাকেন, অথচ তাঁরা যে ধরনের সিনেমা ও ধারাবাহিক খানিকটা নিজেদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন, সেগুলোতেই থাকে যথেষ্ট সামাজিক বার্তা। সেই কারণেই তাদের মনে বেশিরভাগ সময় চরিত্রই শিল্পীর আসল পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। সব্যসাচীর ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে!

‘দেবের বাবা’ হিসেবে তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের কাছে তিনি এক পরিচিত মুখ। কারণ তাঁরা ভরসা করেছিলেন সেই পরিবারকেন্দ্রিক গল্পগুলোর ওপর, যেখানে তিনি বাবা চরিত্রে পরিবারের অভিভাবকের মতো। একবার তাঁর বক্তব্যেই মিলেছিল সেই ঘটনার বর্ণনা! তিনি বলেছিলেন, “গ্রামের লোকেদের অশিক্ষিত ভাবাটা ভুল। বরং তারা যে ছবি দেখেন, সেখানে সামাজিক মূল্যবোধ তাই আসল। আমার বাড়ির কাছেও এমন কিছু নিম্নশ্রেণীর মানুষরা থাকেন, যে এলাকাটাকে বলা হয় বস্তি।

সেখানকার কিছু মানুষদের কাছে আমি আজও ‘দেবের বাবা’ হিসেবেই পরিচিত! কারণ, তারা পরিবারের সঙ্গে ওই বিনোদনমূলক ছবিগুলোই দেখতে অভ্যস্ত। যেখানে মূলত আমি দেবের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাদের স্মৃতি এবং মাথায় ওটা গেঁথে গেছে। একটা সময় যেখানেই যেতাম, আমাকে ওই নামেই ডাকা হতো।” অভিনেতার কথায়, চরিত্রের মাধ্যমে সেই সব মানুষদের সঙ্গে শুরু থেকেই তিনি গভীর সংযোগ তৈরি করেছেন। তাদের কাছে তিনি কেবল একজন অভিনেতা নয়, বরং পরিবারের একজন প্রিয় সদস্যও।

যিনি তাদের জীবনের ছোট-বড় অনুভূতিকে স্পর্শ করেছেন। তাই, সব্যসাচী চক্রবর্তীর জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র বড় চরিত্রে অভিনয়ের কারণে নয়। তার আন্তরিকতা, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষমতা এবং সামাজিক মূল্যবোধকে বিনোদনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াই তাঁকে এক বিশেষ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। সেই কারণে আজও পুরনো দিনের দর্শকরা তাঁকে শুধুমাত্র ‘গোরা’ হিসেবেই, নতুন প্রজন্ম ‘ফেলুদা’ এবং কিছু সংখ্যক মানুষ ‘দেবের বাবা’ হিসেবেই তাঁর পরিচয় দেন।

Piya Chanda