জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আমি যা ঠিক করে দেব, তাই খাবি!” প্রয়াত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর স্মৃতিচারণায় কিংবদন্তি মাধবী মুখোপাধ্যায়! কেন সহশিল্পী মাধবীকে এমন কড়া নিয়মে রাখতেন উত্তমপত্নী সুপ্রিয়া?

বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের কথা উঠলেই ‘মাধবী মুখোপাধ্যায়’ (Madhabi Mukherjee) এবং ‘সুপ্রিয়াদেবী’র (Supriya Devi) নাম আলাদা করে উচ্চারণ করতেই হয়। একদিকে মাধবী ছিলেন সংযত আবেগ, বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয় আর নীরব অভিব্যক্তির প্রতীক। অন্যদিকে সুপ্রিয়াদেবী ছিলেন রূপ, শালীনতা এবং অভিজাত অভিনয়ভঙ্গির এক অনন্য মিশ্রণ। সেই সময়ের বাংলা ছবিতে অভিনয় মানে শুধু সংলাপ বলা নয়, চরিত্রের ভিতরে ঢুকে তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার শিল্পটাই তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে এক প্রজন্ম শিখেছে কীভাবে পর্দায় সংযম, সৌন্দর্য আর গভীরতা একসঙ্গে ধরা যায়। আজও সেই যুগের সিনেমা দেখলে বোঝা যায়, কেন তাঁদের বলা হয় বাংলা ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্মরণীয় শিল্পীদের মধ্যে একজন। প্রসঙ্গত, এই দুই অভিনেত্রীর মধ্যে সম্পর্কটা ছিল পেশার বাইরে কিছুটা আত্মিক। আজও সুপ্রিয়া দেবীকে মনে পড়লে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে প্রথমেই ভেসে ওঠে তাঁর আন্তরিক যত্ন আর খাওয়ানোর অভ্যাস। কাজের ফাঁকে হোক বা আউটডোর শুটিংয়ে, খাবারের ব্যাপারে সুপ্রিয়াদেবীর নজর ছিল অসম্ভব কড়া।

কে কী খাচ্ছে, আদৌ ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, সবকিছুতেই ছিল তাঁর চোখ। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, বাইরে শুটিংয়ে গিয়ে আজেবাজে খাবার একদমই পছন্দ করতেন না তিনি। কী খাওয়া উচিত বা কী নয়, এই সিদ্ধান্তটা যেন নিজের হাতে তুলে নিতেন আর তাতেই লুকিয়ে থাকত এক ধরনের মমতা। একসঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করার সময় এই অভ্যাসটা বারবার সামনে এসেছে। লাঞ্চ ব্রেক এলেই সুপ্রিয়াদেবী কাউকে না কাউকে ডেকে নিতেন। তিনি বলতেন, “চল, একসঙ্গে খাই।”

কখনও এত যত্ন করে খাওয়াতেন যে মাধবী অসুস্থ পর্যন্ত হয়ে পড়েছেন, আবার কখনও হালকা রান্নাও করাতেন শরীরের কথা মাথায় রেখে। বিশেষ করে, উত্তম কুমারের জন্য কম মশলা দিয়ে রান্না করতেন তিনি। কোন ছবিতে তিনি বা উত্তম কুমার না থাকলেও, লাঞ্চের সময় মাধবীর জন্য খাবার ঠিক পৌঁছবেই আর এই ব্যাপারে সুপ্রিয়াদেবী ছিলেন অবিচল! খাবার যেন তাঁর কাছে শুধু খাওয়ার বিষয় নয়, এক ধরনের যত্নের ভাষা। মাধবী মুখোপাধ্যাকে তিনি বলতেন, “আজেবাজে খাওয়ার একদম নয়, আমি যা ঠিক করে দেব, তাই খাবি!”

উল্লেখ্য, ছোটপর্দায় কাজের সময়ও এই অভ্যাস বদলায়নি। সেই সময়ে ‘শান্তিনিকেতন’ ধারাবাহিকে শুটিং চলাকালীন লাঞ্চ ব্রেকে মাধবী আর সাবিত্রীকে ডেকে নেওয়া ছিল প্রায় নিয়ম। সেই ডাকের মধ্যে ছিল জোর কম, আদর বেশি। শুধু সহকর্মীদের খাওয়ানো নয়, অতিথি আপ্যায়নেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে উত্তম কুমারের জন্মদিন মানেই বহু মানুষের সমাগম, আর প্রত্যেককে আলাদা করে খেয়াল করার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিতেন সুপ্রিয়াদেবী। মাধবীর চোখে, আতিথেয়তার এমন নিখুঁত উদাহরণ তিনি খুব কমই দেখেছেন।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও, এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই আজও মাধবীর মনে সবচেয়ে বেশি জায়গা করে আছে। এই সব স্মৃতির মাঝেই যেন চাপ পড়ে গিয়েছে সুপ্রিয়াদেবীর আরও একটি দিক। এত বড় একজন অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ভীষণ বড় মনের মানুষ। অভিনয়, নাচ, সাফল্যর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের খোঁজ রাখার যে ক্ষমতা, তা ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়। মাধবীর স্মৃতিচারণায় তাই সুপ্রিয়াদেবী শুধু এক কিংবদন্তি শিল্পী নন, তিনি সেই মানুষটি যিনি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন এক থালা খাবার বাড়িয়ে দিয়ে।

Piya Chanda

                 

You cannot copy content of this page