জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

সীমাহীন প্রতিভার পরিচয় দিলেও সেরার তকমা পেল না মূক-বধির শিল্পী পূজা হালদার! প্রতিটি পর্বে বিচারক থেকে দর্শক-মন জিতেও এই অবিচার কেন? “ভীষণ অন্যায়! পূজাই ছিল ওই সম্মানের যোগ্য!”–বিজয়ী না করায় দর্শকদের ক্ষোভ!

বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় নাচের মঞ্চ ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর (Dance Bangla Dance Grand Finale) এবারের সিজন শেষ হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ ফাইনাল দিয়ে। সেরা খেতাব জিতেছে রিজু–রাজু ও কৃত্তিকা, আর সেরার সেরা হয়েছে আদিত্য কর্মকার। এদিকে রানারআপ হিসেবে উঠে এসেছে মূক-বধির প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী ‘পূজা হালদার’ (Puja Halder) -এর নাম। তবে এই ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অনেক দর্শকের দাবি, জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও, এই মঞ্চে নিজের সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে পূজা বারবার দুর্দান্ত নাচ উপহার দিয়েছে।

পূজা প্রতিটি ধাপে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। গান শুনতে না পেয়ে কেবলমাত্র ছন্দের অনুভূতি এবং আবেগকে ভর করে নাচ করাটা যতটা কঠিন, ততটাই অবিশ্বাস্য। পূজার প্রতিটি পরিবেশনা সেই অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলেছিল। তবুও সেই জায়গা থেকে তাকে বিজয়ী না করাটা একেবারেই ন্যায্য সিদ্ধান্ত নয়, আর সেখানেই দর্শকদের ক্ষোভের জন্ম। ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা সঙ্গী হলেও পূজা নাচের প্রতি তার ভালোবাসা কখনও হারাননি। কথা বলতে না পারা, কানে শুনতে না পাওয়া—এসব সীমাবদ্ধতাকে সে শক্তিতে রূপান্তর করেছেন।

ছোট থাকতেই বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছিল, মেয়ের এই অক্ষমতা জানতে পেরে। মা-ই শক্তি জুগিয়েছেন অক্ষমতাকে অস্ত্র করতে। সেই অস্ত্র দিয়েই সে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন প্রতিবার। বিচারকেরা একাধিকবার তার নাচে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। এমন এক শিল্পীকে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী না করা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। দর্শকদের অনেকে মনে করছেন, পূজা শুধু একজন প্রতিযোগী নন, তিনি লড়াইয়ের প্রতীক। প্রতিটি নাচে সাহস, অধ্যবসায় আর আবেগের এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে পূজা।

তাই তাকে শুধুমাত্র রানারআপ ঘোষণা করা, অনেকেই মনে করেছেন যেন অবিচার করা হয়েছে। তাদের মতে, এই জয়ের দাবিদার পূজা-ই ছিল। অন্যদিকে, প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর নাম ঘোষণার পর থেকেই নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, পূজার থেকে যে প্রতিযোগী জিতেছে সে যথেষ্ট বহুমুখী ছিল না এবং বারবার একই ধরণের নাচ করেছে। অথচ পূজা প্রতিটি ধাপে নতুন কিছু এনেছে এবং নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। সমাজ মাধ্যম জুড়ে এখন তুমুল প্রতিক্রিয়া।

কেউ কেউ সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন এই প্রতিযোগিতার বিচার পদ্ধতি নিয়ে। অনেকে লিখেছেন, নাচের বহুমুখিতা ও পরিশ্রমের দিক থেকে পূজা সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তবুও সে বিজয়ী হল না, যা অনেকের কাছেই হতাশাজনক ও অন্যায্য মনে হয়েছে। কেউ লিখেছেন, “একজন বধির ও বোবা হয়েও পূজা হালদার সবার সঙ্গে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করেছে। প্রতিটি রাউন্ডে ভিন্ন ভিন্ন নাচ দেখিয়েছে। অথচ শেষ পর্যন্ত তাকে বিজয়ী করা হয়নি, এটা ভীষণ অন্যায়!” অন্যজনের কথায়, “যে জিতেছে, মোটেও বহুমুখী ছিলে না।

পূজা অনেক ভালো পারফর্ম করেছে। তাকে না জেতানো একেবারেই অযৌক্তিক।” সব মিলিয়ে পূজা হালদারকে বিজয়ী না করার সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। নাচের মঞ্চে তার লড়াই কেবল ব্যক্তিগত নয়, সমাজের জন্যও এক প্রেরণা। কিন্তু এই প্রেরণাদায়ক যোদ্ধাকে শেষমেশ বিজয়ের মুকুট না দেওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, “ডান্স বাংলা ডান্স”-এর এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রতিভার প্রতি নয়, সাহস ও দৃঢ়তার প্রতিও অবিচার। এখন দেখার, পূজা এই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে কতদূর এগিয়ে যান।

Piya Chanda