টলিউড (Tollywood) এখন কাজের পরিবেশ থেকে লোকেদের মানসিকতা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখনকার দিনে এত উন্নত প্রযুক্তি এসে গেছে যে শ্যুটিং করা অনেক ক্ষেত্রেই সহজ হয়েছে। অভিনেত্রীরা ভ্যানিটি ভ্যানে বসে আরামের সঙ্গে প্রস্তুতি সেরে নেন, শ্যুটিংয়ের মাঝে বিশ্রামও পান। এমনকি আউটডোর কাজ করতে হলেও, অনেক আধুনিক ব্যবস্থাই তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। কিন্তু দুই দশক আগে চিত্রটা ছিল অন্যরকম। শ্যুটিং সেটের অবস্থা এতটা আরামদায়ক ছিল না। তখনকার দিনে নায়িকাদেরকে (Actress’s Experience) আরও কঠিন পরিস্থিতি মেনে নিতে হত।
সেই সময়টাতেই টালিগঞ্জে ব্যস্ততম অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‘শতাব্দী রায়’ (Satabdi Roy)। আর সেই সময়ে শ্যুটিং নিয়ে নানান ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি, যা আজও তাঁকে ভাবায়! প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে হরনাথ চক্রবর্তীর জনপ্রিয় ছবি ‘রাজা রানি বাদশা’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবির মূল নায়িকার চরিত্রে ছিলেন শতাব্দী রায়। শ্যুটিং হয়েছিল বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ছিল ভয়াবহ গরমের কষ্ট। তখনকার দিনে কোনও এসি বা ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল না।
আজকের মতো সুবিধাজনক পরিবেশে কাজ করা তো দূরের কথা, কখনও কখনও টানা রোদ আর গরমে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে উঠত। কিন্তু কাজের প্রতি ভালোবাসা আর পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে সেই পরিস্থিতিতেও লড়াই চালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন, মুকুটমণিপুরের সেই শ্যুটিংয়ের দিনগুলো ছিল এক কথায় ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! প্রচণ্ড গরমে শুধু মানুষ নয়, ছবিতে থাকা কুকুরটিও মাটিতে পা রাখতে পারছিল না!
ঠিক তখনই শতাব্দী প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, “যেখানে একটা কুকুর দাঁড়াতে পারছে না, সেখানে আমাকে দিয়ে কীভাবে নাচ-গান আর অভিনয় করানো সম্ভব?” যদিও শ্যুটিং থামানো যায়নি, কারণ প্রযোজনা আর সময়ের চাপ ছিল প্রবল। তাই পরিচালক এবং প্রযোজক মিলে সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করেছিলেন এক অদ্ভুত উপায়ে। শতাব্দীর কষ্ট কমানোর জন্য বাইরে থেকে বরফ আনা হত ট্রাকভরে। শুটিং চলার সময় গরমে হাঁসফাঁস করা তাঁকে সামলাতে হতো নানা কৌশলে।
আর কাজ শেষে সেই বরফ গলে যাওয়া জলে স্নান করতেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর ঠান্ডা হওয়ার একমাত্র উপায়। এর থেই স্পষ্ট যে, নায়িকার সেই সময়কার যন্ত্রণা কতটা অসহনীয় ছিল। আজকের দিনে যখন ভ্যানিটি ভ্যানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে তারকারা বিশ্রাম নেন, তখন সেই সময়কার এই লড়াইয়ের গল্প কাউকে শোনালে অনেকেরই অবিশ্বাস হয়। কিন্তু এটাই ছিল নায়িকার কাছে বাস্তব। আজ ফিরে তাকালে শতাব্দীর মনে হয়, সেই যন্ত্রণা বৃথা যায়নি।
আরও পড়ুনঃ সীমাহীন প্রতিভার পরিচয় দিলেও সেরার তকমা পেল না মূক-বধির শিল্পী পূজা হালদার! প্রতিটি পর্বে বিচারক থেকে দর্শক-মন জিতেও এই অবিচার কেন? “ভীষণ অন্যায়! পূজাই ছিল ওই সম্মানের যোগ্য!”–বিজয়ী না করায় দর্শকদের ক্ষোভ!
দর্শকের ভালোবাসা আর প্রশংসা তাঁর সেই দিনের কষ্টকে সার্থক করে তুলেছে। যতবারই তিনি সেই কঠিন পরিস্থিতির কথা ভাবেন, ততবারই উপলব্ধি করেন শিল্পীজীবনে লড়াই ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। বাঁকুড়ার গরমে বরফগলা জলে স্নান করার স্মৃতি তাঁর কাছে এখনও অমূল্য অভিজ্ঞতা, যা আজও তাঁকে শক্তি জোগায়। সেই স্মৃতি শুধু কষ্টের নয়, বরং প্রমাণ যে পরিশ্রম আর নিষ্ঠা থাকলে অসম্ভবকেও জয় করা যায়।