জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আজকাল রিয়ালিটি শোতে পুরোনো গানগুলোকেই প্রোমোট করা হয়, আমাদের সময় বা তার আগেও নিজের গানকে এতটা করা হতো না…মুখ খুললেই আমাদেরকে আর ডাকা হবে না!” রিয়েলিটি শো সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লোপামুদ্রার স্পষ্ট কটাক্ষ! প্রশ্ন তুললেন, বাংলা সংগীতের ভবিষ্যৎ কি সত্যিই নিরাপদ?

নতুন প্রজন্মের সংগীতচর্চা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি সঙ্গীত শিল্পী ‘লোপামুদ্রা মিত্র’ (Lopamudra Mitra) যেন একদম অন্য সুরে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। দীর্ঘ তিন দশকের পথচলায় তিনি যেমন বিভিন্ন ঘরানার গান গেয়েছেন, তেমনই শিল্পী হিসেবে নিজের স্বাধীন পরিচয়টাও ধরে রেখেছেন। সমকালীন শিল্পীদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত মত, সবকিছু নিয়ে অকপটে কথা বললেও, তাঁর বক্তব্যের মূলে ছিল আজকের সংগীতজগতের বাস্তবতা। তাঁর কথায় কোনও উত্তেজনা নেই, উল্টে রয়েছে অভিজ্ঞতার ছাপ আর ব্যবহারিক বোধ।

আজকের অনেক গায়কই সামাজিক মাধ্যম আর জনপ্রিয়তার দৌড়ে নতুন গান তৈরি করার চেয়ে পুরোনো সুর বা পরিচিত হিটের উপর ভরসা করছেন, এদিন লোপামুদ্রা সেই ছবিটাই তুলে ধরলেন। তাঁর নিজের কেরিয়ারে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ছিল না, তেমনই বিভিন্ন সময়ে তিনি ভরসা রেখেছেন নতুন সৃষ্টি আর ভিন্নধর্মী উপস্থাপনায়। তাই আজকের পরিস্থিতি দেখে তাঁর খানিক হতাশা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবু তিনি তর্জন-গর্জন করেননি, বরং বাস্তবের কথাই বলেছেন যে শিল্পীর স্বাধীনতা থাকলেও তার প্রয়োগ আজ সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

গায়িকার কথায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠেছে এসেছে! এদিন তিনি তুলে ধরলেন সঙ্গীতজগতের অদৃশ্য চাপের কথা। অনেকেই মনে করেন টেলিভিশনের বিভিন্ন ‘রিয়েলিটি শো’ শিল্পীদের প্রচারের বড় জায়গা, কিন্তু লোপামুদ্রা তা নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর মতে, জনপ্রিয়তার খেলায় মৌলিক গান হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগীরা একটুও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না আর বিচারক হওয়া শিল্পীরাও চান না বিতর্কের কেন্দ্রে থাকতে। শিল্পের ভেতরের চাপটা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং সেটাই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন।

শিল্পীর নিজের ভাষায়, “আমাদের সময় বা তার আগেও নিজের গানকে আজকের মতো এতটা প্রমোট করা হতো না। তাছাড়া সেই সুযোগও ছিল না, কিন্তু এখন আছে! এখন পুরোনো গানকে প্রমোট করা যায়, এমনকি সেটাই করা হয় নাচ বা গানের রিয়েলিটি শোতে। আমরা বিচারক হয়ে যাই ঠিকই কিন্তু বলার অধিকার থাকে না যে প্রতিযোগীদের নতুন গান করতে হবে বা নতুন গানই ব্যাবহার করতে হবে। কারণ, এক তো প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে যাবার ভয় নিজেদের গানকে তারা ভরসা করতে পারে না আর দ্বিতীয়ত, মুখ খুললেই আমাদেরকে আর ডাকা হবে না!”

এই স্বীকারোক্তিতেই যেন তাঁর ভেতরের দায়িত্ববোধটা সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে। তিনি কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং শিল্পের বর্তমান কাঠামো নিয়ে ভাবিত। যে মানুষটা বারবার বলেছেন শিল্পীর কোনও রঙ থাকা উচিত নয়, যিনি সুযোগ কম পেলেও নিজের সৃষ্টিকে থামিয়ে দেননি– তাঁর এই বক্তব্য তাই ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, এক গভীর পর্যবেক্ষণ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি এই বাধা ভেঙে নতুন সুরে এগোতে পারবে? লোপামুদ্রা আশাবাদী, তবে সেই আশার সঙ্গে যুক্ত আছে বাস্তবতার কঠিন উপলব্ধিও আর সেখানেই তাঁর কথার মূল্য সবচেয়ে বেশি।

Piya Chanda